নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৬ PM , আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০১:২১ PM
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলন ও জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছে “শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরাম”। সংগঠনটি বলছে শিক্ষামন্ত্রী তিনি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে নতুন কারিকুলামের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরাম-এর মুখপাত্র আমিরুল ইসলামের পাঠানে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে সারা দেশব্যাপী আন্দোলন চলমান। এ নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির দেয়া বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের(শিক্ষক,অভিভাবকসহ শিক্ষাঅনুরাগীদের) হেয় করেছেন। তিনি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে নতুন কারিকুলামের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।
সম্মিলিত অভিভাব ফেরাম বলেছে, শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে পরীক্ষার পরিবর্তে মূল্যায়নের কথা বলেছেন। নতুন মূল্যায়নে শিক্ষকসহ অংশীজনদের থাকার কথা। এই অংশীজন কারা হবেন সেটা যেমন স্পষ্ট নয় অন্য দিকে অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা জানি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বা গভনিং বডি কতটা প্রভাব বিস্তার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। নির্দ্বিধায় বলা যায় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অংশীজনের অংশগ্রহণ স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব, পছন্দ-অপছন্দ বাড়াবে। এছাড়া অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এও বলতে পারি শিক্ষকদের হাতে এক তরফা মূল্যায়নের নাম্বার থাকলে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হওয়া সম্ভব নয়।
অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছেন ছেলেমেয়েরা এখন শুধু বই থেকে নয়, বাইরে থেকে ও শিখবে। এক্ষেত্রে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ইন্টারনেট বা গুগলের ব্যবহার কতটা উপযোগী-উপকারী! করোনাকালে এবং তার পরবর্তী সময় শিশু-কিশোররা যে পরিমাণ মোবাইলে আসক্ত হয়েছে এবং তাদের আচরণেও যেসব পরিবর্তন এসেছে তা নিয়ে আমরা অভিভাবকরা তো বটেই শিক্ষক, শিশু বিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে ব্যানবেইসের তথ্য মতে করোনাকালে গ্রামের ৯৪% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাহিরে ছিল (০৭ই ডিসেম্বর ২০২১ইং বণিকবার্তা)। আর দ্রব্যমূল্যের এই ভয়ানক ঊর্ধ্ব গতির সময়ে গ্রাম-শহরের অভিভাবকরা কিভাবে ডিভাইস, ইন্টারনেট এবং ব্যবহারিক ক্লাসের উপকরণের খরচ বহন করবেন?
শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে বিভাগ না থাকার বিষয়ে অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনেছেন। আমরা বলতে চাই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত কতটা উপযোগী হবে এবং বিষয়টাকে বাস্তবায়নের জন্য গ্রাম-শহরের সর্বস্তরে সেটার জন্য যে আয়োজন এবং শিক্ষক প্রয়োজন তা প্রস্তুত কি? আমরা আরো দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- একজন শিক্ষার্থী বিভাগ বিভাজনের মধ্য দিয়ে যত খানি বিজ্ঞান শিক্ষার আওতায় আসতো বা আসতে পারতো তার সেই সুযোগটুকুও আর থাকলোনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেখানে এই কারিকুলাম দিয়ে কি করে সম্ভব এটা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রশ্ন।
তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে শিক্ষাক্রম বাতিলের আন্দোলনকে টাকা নিয়ে অভিভবাকরা আন্দোলন করছেন এবং কোচিং- গাইড ব্যবসায়ীদের ইন্ধন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার পরিবেশ এবং সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। নতুন কারিকুলামের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি বাহিরের কার্যক্রম এবং অভিভাবকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বা পড়বেন। মাননীয় মন্ত্রী সবাইকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন।
পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দিয়ে ইউনিক কোড ব্যবহারের কথা বলছেন। আমরা মনে করি এটা শিক্ষার মানকে আরো নিচে নামিয়ে দেবে। আপনি আরও বলেছেন যে, ব্রিটিশ কারিকুলাম ভালো না। তাহলে ইংলিশ মিডিয়ামে কোন কারিকুলাম পড়ানো হয়? উচ্চতর গণিত ও জ্যামিতি তুলে দিয়ে কোন দেশের কারিকুলাম বাস্তবায়ন করছেন?
শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরাম শিক্ষমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। সেই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় বর্তমান শিক্ষাক্রম বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তারা।