নামাজের কাতার থেকে ইউএনওকে সরতে বলায় ‘চাকরি গেল’ ইমামের

ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম
ইউএনও মো. ফোরকান এলাহি অনুপম  © সম্পাদিত

কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর পর ইউএনওকে একটু সরে দাঁড়াতে বলায় চাকরি হারালেন ইমাম। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন ভাটরা কাছারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। আজ শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হয়। বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুসল্লিরা। 

মসজিদে জুমার নামাজ চলার সময় শার্ট প্যান্ট পরা একজন ভদ্রলোক এসে ইমামের বরাবর প্রথম কাতারে (সারি) বসেন। তখন মুয়াজ্জিন সেই ভদ্রলোককে ইমাম বরাবরে জায়গা থেকে একটু সরে জায়গা করে দিতে বললেন। কিন্তু ভদ্রলোক সরতে আপত্তি করায় ইমামও তাকে সামান্য সরতে অনুরোধ করেন। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়েই ওই ইমাম জানতে পারেন তার আর ইমামের চাকরি নেই। যাকে সরতে বলা হয়েছিল তিনি ছিলেন কুমিল্লার লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম। 

এদিকে ইউএনও অনুপম ক্ষুব্ধ হয়ে একাধিকবার সেই ইমামকে মসজিদের পুকুরের পানিতে চুবানোর হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন চাকরি হারানো সেই ইমাম।

মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আবুল বাশার বলেন, এই ঘটনার পর নামাজ শেষে আমি মসজিদ থেকে বের হলে ওই ভদ্রলোক আমাকে ও মুয়াজ্জিনকে মসজিদের দক্ষিণে সরকারি পুকুরপাড়ে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত একজন আমাকে প্রশ্ন করেন আপনি ওনাকে চিনেন? আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন ওনি আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার। আমি তাৎক্ষণিক বললাম স্যার আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি। তখন ইউএনও স্যার উত্তেজিত হয়ে বললেন, কোন কথা নেই। তোকে এখন পানিতে চুবাবো। তুই কত বড় মাওলানা হয়েছিস তোর ইন্টারভিউ নিব। তখন তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ ও মেম্বার গোলাপ হোসেনকে মোবাইল ফোনে কল করে দ্রুত পুকুরপাড়ে আসতে বলেন। এরপর তিনি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে ধরতে আমাকে কোরআন—হাদিস ও ইসলামের ঐতিহাসিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পেরেছি। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় দিতে পারিনি।

আরও পড়ুন: ঢাবির ২৯তম উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, প্রজ্ঞাপন জারি

ইমাম আরও বলেন, একপর্যায়ে তিনি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বলেন, আমি যখন বলবো তখন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কমিটির লোকদের আমার অফিসে নিয়ে আসবেন। উত্তরে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এমনি গেলে যাবে। না গেলে ধরে নিয়ে আসবো। প্রায় দুই ঘণ্টা জেরার পর আমি বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে পুকুরপাড় থেকে পাকা সড়কের দিকে গেলে মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় ভাটরা গ্রামের জহিরুল ইসলাম নামের একজন আমাকে বলেন, হুজুর আপনি ভালো মানুষ। আপনাকে আমরা অনেক সম্মান করি। ইউএনও স্যার এবং চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে পাঠাইছে। কালকে থেকে আপনি আর মসজিদে আসবেন না। আসলে অপমান হবেন।

মসজিদের মুসল্লি মাসুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারি অফিসারের বিষয়ে সত্য কথা বলে না জানি কোন বিপদে পড়ি। তারপরও বলছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারি পুকুরে সকাল থেকে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলেন। জুমার নামাজে সামনের কাতারে তিনি ইমামের বরাবর বসেছিলেন। ইমাম ও মুয়াজ্জিন না চিনতে পেরে ওনাকে সরতে বলেছিলেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নামাজের পরে পুকুরপাড়ে নিয়ে ইমামকে অনেক বকাবকি করেন। পুলিশ ডেকে আনার হুমকি দেন।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি শুক্রবার অন্য মসজিদে নামাজ পড়েছি। আমাদের মসজিদে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু বিকেলে শুনেছি জুমার নামাজের পরে ইমামের সাথে নির্বাহী অফিসারের সমস্যা হয়েছে।

স্থানীয় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ বলেন, ইউএনও স্যার ইমামকে পানিতে চুবাতে বলেছে কিনা আমি শুনিনি। তবে ইমাম মুয়াজ্জিন সঠিক কাজ করে নাই। ইউএনও স্যারকে নামাজের সময় সরতে বাধ্য করেছে। এটা তারা করতে পারে না। তাছাড়া ইমামের এলেম অনেক কম। ইউএনও স্যারের অনেক সহজ প্রশ্নের উত্তর ইমাম দিতে পারেনি। সে কারনে আমি কমিটির লোকজনকে বলেছি ইমামকে বাদ দিতে।


সর্বশেষ সংবাদ