হামলাকারীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের 

কুমিল্লায় হামলার জেরে শাহাবাগে অবস্থান করে ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ।
কুমিল্লায় হামলার জেরে শাহাবাগে অবস্থান করে ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ।  © টিডিসি ফটো

কুমিল্লায় এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের দুর্গাপূজা সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলনরত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ।

আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর)  দুপুরে শাহবাগ থানার সামনে অবস্থানকালে ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়।

কর্মসূচির শুরুতে তারা মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল বিপ্লব কর্তৃক স্থানীয় এমপি মৃণাল কান্তি দাসকে মালাউন বলা এবং কুমিল্লা জেলার এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের দুর্গাপূজা সম্পর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে  মিছিল বের করে শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে সেখান থেকে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে শাহবাগ থানার সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

তাদের অভিযোগ, এসকল নেতিবাচক বক্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় কুমিল্লা শহরের নজরুল এভিনিউ সড়কে ছাত্র ও যুব ঐক্য আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে ধাওয়া করে হামলা চালিয়েছে কুমিল্লার স্থানীয় এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের সমর্থক নেতা কর্মীরা।

এসময় হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত বলেন, গত চার তারিখে কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্গাপূজাকে শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেখানে কুমিল্লা জেলার এম.পি বাহাউদ্দীন বাহার বলেছেন দুর্গাপূজা নাকি মদযুক্ত পূজা। মদ খাওয়া বন্ধ করলে পূজার সংখ্যা কমে যাবে। তারই প্রতিবাদে আমরা সমগ্র বাংলাদেশে যুব ঐক্য পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ, ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও মহিলা ঐক্য পরিষদ মিলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলের ডাক দিয়েছিলাম। এ পর্যন্ত ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এখানে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন। পুলিশের ভাবমূর্তি আমরা নষ্ট করতে চাই না। আমরা বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতীগত সংখ্যালঘুরা সম্পূর্ণভাবে সচেতন। কিন্তু ঘা খেতে খেতে আমাদের অবস্থানটা এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে আজকে আমরা যন্ত্রণায় কাতর। আজকে আমাদের অন্তর জ্বলছে। 

তিনি পুলিশকে ইঙ্গিত করে বলেন, আপনা আমাদের উপর কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করতে পারবেন, লাঠিপেটা করতে পারবেন তাতে আমাদের দুঃখবোধ থাকবে না। কিন্তু আমরা আমাদের যন্ত্রণার অবসান চাই। আমরা আমাদের দুঃখের অবসান চাই। যারা আমাদের ভোটে এমপি হয়, গাড়ি পায় আজকে তারাই আমাদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের দাবি আমরা শুনেছি, কতৃপক্ষের মধ্য দিয়ে সেটা সরকারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবো। কিন্তু আপনারা যে জায়গা বেছে নিয়েছেন সেটা ঠিক জায়গা নয়। এখানে দুইপাশে বড় বড় দুইটা মেডিকেল এবং পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আন্দোলন করলে হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। অ্যাম্বুলেন্স গুলো দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি আপনাদেরকে জাদুঘরের পাশে জায়গা করে দিচ্ছি আপনারা সেখানে আন্দোলন করতে পারেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪অক্টোবর  কুমিল্লা ৬ আসনের এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের ‘দুর্গাপূজা একটি মদযুক্ত পূজা’  এমন একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি বলেন, মদ খাওয়া কমিয়ে দিলে  পূজার সংখ্যা কমে যাবে। 

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফয়সাল বিপ্লব এমপি মৃণালকে উদ্দেশ্য করে মালাউন, নপুংশক, চাঁড়ালসহ গালিগালাজ করলে সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।


সর্বশেষ সংবাদ