দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে সরকার: ডা. এনামুর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৪ PM , আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৫৭ PM
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে; যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় ও যুব সমাজের জন্য নেতৃত্ব বিকাশ ও সক্ষমতা উন্নয়নে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (০৪ অক্টোবর) রাজধানীতে আয়োজিত ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় নেতৃত্ব’ শীর্ষক ‘মার্কেট সিম্পোজিয়ামে’র উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্স এবং খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এসময় আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের উদ্যোগের মধ্যে যে সকল স্থানে সাইক্লোন প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি (সিপিপি) ভলেন্টিয়ার নেই সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় যুবদের মাধ্যমে ভলেন্টিয়ারে কাজ পরিচালনা; সতর্ক সংকেত প্রচার; ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সাইক্লোন শেল্টার ব্যবস্থাপনার কাজ; স্থানীয় বয়স্কদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে সহায়তা; স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় শুকনা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার মতো উদ্যোগ রয়েছে। এছাড়াও জলবায়ু ঝুঁকি প্রশমনের জন্য সরকার কর্মসুচিগুলোর মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, সমগ্র পৃথিবী এখন উষ্ণ, প্রাকৃতিক এবং মনুষ্য দুর্যোগের ফলে ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তন। আর এ পরিবর্তন মোকাবেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছে যুবরা। তাদের এ উদ্যোগ কার্যকরী-করণে স্থানীয় পর্যায়ের যুবদের ইউনিয়ন পরিষদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় নেতৃত্বের সক্ষমতা সম্প্রসারণের বিকল্প নেই জানিয়ে এসময় অক্সফ্যাম বাংলাদেশের হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন এন্ড ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স’র প্রধান মো. আতোয়ার রহমান বলেন, আমাদের সকলকে একযোগে এ লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদ দুর্যোগ মোকাবেলায় তরুণ স্বেচ্ছাসেবক মডেল গঠনের কথা বলেন। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়, গণমাধ্যমের সচেতনতামূলক প্রচারণা দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি অগ্রসর ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।
দুর্যোগ বিষয়ে সরকার ও স্থানীয় সরকারকে মনিটরিং এর দিকে আরও নজর দিতে হবে জানিয়ে অনুষ্ঠানে জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও বেশি পদক্ষেপ নেয়া গেলে দুর্যোগ অনেকটা হ্রাস করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হচ্ছে দুর্যোগ পূর্ব-প্রস্তুতি ও দুর্যোগকালীন সাড়াদান। বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি তরুণদের অংশগ্রহণের হার ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে দেশে স্বেচ্ছাসেবক, বিশেষ করে নারী স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যার ফলে দুর্যোগকালে মৃত্যুসহ দুর্যোগের সাধারণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমছে বলেও মনে করেন এই শিক্ষক।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নয় সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে তারা নিজেদের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অবশ্যই তাদের মানবিক মূল্যবোধও সৃষ্টি করতে হবে। একইসাথে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণ ও প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, অক্সফ্যাম বাংলাদেশের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন, জাগো নারী এবং এসকেএস ফাউন্ডেশন জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা লক্ষিত জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে নারী ও যুব সম্প্রদায়ের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি গ্রহণ ও যুব নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে জলবায়ু ঘাত-সহিঞ্চু কমিউনিটি তৈরি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বরিশাল, বরগুনা ও গাইবান্ধা জেলায় ‘এশিয়া কমিউনিটির দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং রূপান্তর’ শিরোনামে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এই কর্মসূচি বাংলাদেশ, নেপাল, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়াতে একসাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে।