বাস্তবতাহীন বাজেট দিয়েছে সরকার: সিডিপি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৩, ০৫:৫২ PM , আপডেট: ০২ জুন ২০২৩, ০৬:১৬ PM
দেশে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার যে বাজেট পেশ করেছে সেটির সাথে বাস্তবতার তেমন একটা সম্পর্ক নেই বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। শুক্রবার (২ জুন) দুপুরে ঢাকার গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে বাজেট সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডি। বাজেটের মাধ্যমে সরকার যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সেগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে কি না সেটি নিয়ে অনেক সন্দেহ ও সংশয় আছে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।
এ পর্যালোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক খাত সংস্কার, পুঁজিবাজার ও আইএমএফের শর্তের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। এমন বাজেট ‘বাস্তবতাহীন’।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকারি সেবা নিতে গেলে যদি কারও করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে ২০০০ টাকা কর দিতে হবে। যার করযোগ্য আয়ই নেই, তার ওপরে বাধ্যতামূলক কর চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্যই বৈষম্যমূলক। এ নিয়ম তুলে দেওয়া হোক।’
মুল্যস্ফীতির বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘২০২৩ সালে পুরোটা সময়ই মূল্যস্ফীতি চলতি অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার উপরে ছিল। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.২৪%, কিন্তু গণনার ক্ষেত্রে বেইজ ইয়ার পরিবর্তন করে ২০২১-২২ করার ফলে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৬% এ। সেটাও কিন্তু গতবারের লক্ষ্যমাত্রার ওপরে।’
আগামী বছরে মূল্যস্ফীতির হার কীভাবে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে, সেই ব্যাখ্যা বাজেটে স্পষ্ট নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের অনুমতিগুলো দুর্বল। তাই প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে হোঁচট খেতে হবে।’
আরও পড়ুন: বাজেট নিয়ে অনলাইনে দেওয়া যাবে মতামত, পাওয়া যাবে সব তথ্য
তিনি বলেন, ‘চলমান অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতার সংকট রয়েছে, সেটা ঠিক করা জরুরি। কিন্তু এবারের বাজেট যেসব অনুমিত ধারণার ভিত্তিতে করা হয়েছে, সেই জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এসব দুর্বল জায়গার প্রতিটিতে বাজেট পরিকল্পনা হোঁচট খাবে। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।’
ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে সিডিপির এই বিশেষ ফেলো বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে বলছি একটি ব্যাংকিং কমিশন করার জন্য। ২০০৯ সালে যখন এই সরকার ক্ষমতায় আসে তখন ঋণ খেলাপি ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আজকে ঋণ খেলাপি ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। যেন এটা নিয়ে কি কারও কোনও দুশ্চিন্তা নেই? এই ঋণ কারা নিচ্ছেন, আর কারা দিচ্ছেন?’
পুঁজিবাজার নিয়ে সিডিপির পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে স্মার্ট সংস্কার প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত আইএমএফের সংস্কার কাঠামোতে পুঁজিবাজারের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। অনুদাননির্ভর, সাহায্যনির্ভর পুঁজিবাজার গড়তে এখানে স্মার্ট সংস্কার প্রয়োজন।
করমুক্ত আয়সীমা নেয়ে সিডিপির পরিচালক বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আওতাও বাড়ানো হয়েছে। তবে পরিমাণে খুব কম বাড়ানো হয়েছে, যা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়।’
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ডাইরেক্ট ট্যাক্সের (প্রত্যক্ষ কর) সুবিধাভোগী বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তাদের আমরা টাচ (স্পর্শ) করতে চাচ্ছি না। ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স (পরোক্ষ) বাড়াতে চাচ্ছি। সরকারের হাতে খুব বেশি রাজস্বও নেই। আইএমফের শর্তানুযায়ী- যে সুবিধাগুলো কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে, সেগুলোতে হাত দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে বলে মনে করি। তার মধ্যে রয়েছে- কর কাঠামোতে হাত না দেওয়া, ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে হাত না দেওয়া, এক্সপোর্ট ইনসেনটিভে হাত না দেওয়া। এ বছর থেকে সেগুলোতে হাত দেওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত সরকার নির্বাচনের পরে এ সংস্কারে হাত দেবে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।