দেশে ন্যায্য কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহবান ওয়েভ ফাউন্ডেশনের

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের বর্তমান কর ব্যবস্থা অনেকাংশেই পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল জানিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন দেশের সকল নাগরিকের জন্য ন্যায্য কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, দেশের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা ন্যায্য নয়, ফলে তা দেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বোঝা হিসেবে কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাজধানীতে ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও ক্রিশ্চিয়ান এইড’র সহায়তায় ‘প্রোমোটিং সিটিজেনস পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন প্রকল্প’র আওতায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা দেশে চলমান কর ব্যবস্থার সমস্যা ও তার সমাধানসহ ন্যায্য কর ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় প্রকল্পের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা খন্দকার তাহসিন আশরাফি।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে বিদ্যমান কর ব্যবস্থা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য নয়। পরোক্ষ করের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দরিদ্রদের প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল, কেননা ভ্যাট সমাজের একটি সচ্ছল অংশের তুলনায় দরিদ্র মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ কেড়ে নেয়। অন্যদিকে, ভ্যাটের কার্যকারিতা সকল শ্রেণির ক্ষেত্রে সমান প্রভাব ফেলে বলে এটি দরিদ্রের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মতে, নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে ধনীদের তুলনায় দরিদ্র মানুষকে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা দরিদ্র ও ধনীর মধ্যে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি করে।

সভায় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কর ন্যায্যতা ও প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পক্ষে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে জানানো হয়েছে, সামাজিক বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা ও অনুশীলনকে শক্তিশালী করা এবং সমাজের ধনী ও সক্ষম ব্যক্তিদের নিকট থেকে উপযুক্ত পরিমাণ কর আদায়ের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রমে উপযুক্ত পরিমাণ বরাদ্দ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট নীতির সংস্কার করা, উচ্চস্তরে কর-জিডিপি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি এবং দেশে কর অব্যাহতি কমানো।

সংস্থাটির সুপারিশে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে, কর সম্পর্কিত তথ্যের অভিগম্যতা (এনবিআর ডেটা সেন্টার) বাড়ানো, বিনিয়োগ আয় এবং সম্পদের উপর কম হার (সম্পত্তি, সম্পদ, এবং উত্তরাধিকার) বৃদ্ধি করার বিষয়ে। একইসাথে দেশে চলমান কর বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি প্রগতিশীল ব্যয়ের অর্থায়ন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সংগঠন এবং যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং নাগরিক সমাজ এবং নীতিনির্ধারকদের উভয় পক্ষের পারস্পরিক মতবিনিময় ও সংলাপের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশগ্রহণমূলক ক্ষেত্র তৈরি করার বিষয়েও সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

সভায় অংশগ্রহণকারীদের আলোচনায় উঠে আসে—বিদ্যমান কর সম্পর্কে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে কর দেওয়ার সংস্কৃতি চালু, এনবিআরের কর আহরণ সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বৈষম্য হ্রাস করে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, কর ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং কর প্রক্রিয়ার সমস্যাবলী চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের মতো বিষয়গুলোও।

কর পরিশোধের বিপরীতে নাগরিকরা কী পরিষেবা পাচ্ছে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া চালু করা প্রভৃতির বিষয়েও আলোকপাত করা হয় আলোচনায়। এছাড়াও আলোচনায় কর ন্যায্যতার বিষয়ে পরিচালিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও সংগঠিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির বিষয়ে সকলে পরামর্শ প্রদান করা হয় আলোচনায়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন ক্রিশ্চিয়ান এইড’র সহায়তায় ‘প্রোমোটিং সিটিজেনস পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন প্রকল্প’ কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। প্রকল্প কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ ও অরিয়েন্টেশন, ক্যাম্পেইন, পলিসি ডায়লগ, আলোচনাসভাসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


সর্বশেষ সংবাদ