বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য দেরিতে বের হলেন প্রধানমন্ত্রী
- জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক
- প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ০১:২৮ PM , আপডেট: ১৯ মে ২০২৩, ০১:২৮ PM
শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর আশকোনার হজ অফিসে ‘হজ কার্যক্রম-২০২৩’ উদ্বোধন এবং হজ যাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু সকালে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থাকায় পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দেরিতে অনুষ্ঠানে যান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেরি হওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমি পৌনে ১০টাই রেডি ছিলাম; পরে শুনলাম পরীক্ষা আছে, আমি গেলে তো রাস্তা বন্ধ করে দেবে, তারা সময় মতো পরীক্ষা দিতে পারবে না। সেই জন্য আমাকে দেরি করতে হলো।
বক্তব্যে হজযাত্রীদের বাংলাদেশের জন্য দোয়া করার আহ্বানও জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী হজযাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, হজ পালন কালে বাংলাদেশের উন্নতি, সমৃদ্ধির পথে যেন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে, বাংলাদেশের মানুষের যেন আর দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে না হয়, সেই দোয়াটা আপনারা আল্লাহর কাছে করবেন। এটা আপনাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্য সুষ্ঠ দুর্যোগও হয়, অগ্নিসন্ত্রাস হয়, বাসের মধ্যে আগুন দিয়ে মানুষ মারে, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ মারে। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কোনো দুর্যোগই যেন বাংলাদেশকে ক্ষতি করতে না পারে, বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি করতে না পারে আপনারা সেই দোয়াটা করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে ২০০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। আমরা জাতীয় শিক্ষা নীতিতে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং মসজিদ-ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমকে জাতীয় শিক্ষা নীতির অন্তর্ভুক্ত করেছি। মসজিদ-ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৫ হাজার ৮৮৩ জন আলেমের সম্মানীর ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, অতীতে হজ পালনে দুর্ভোগ, হজের অব্যবস্থাপনা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, হজযাত্রীদের হয়রানি, ভিসা জটিলতা, ফ্লাইট বিপর্যয় ইত্যাদি সমস্যা ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক। আমরা এ সমস্যা দূর করতে ই-হজ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করেছি। ই-হজ ব্যবস্থাপনার আওতায় হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, রিফান্ড, মক্কা রোড সার্ভিস, ই-হেলথ, ই-ভিসা, ফ্লাইট, হেল্পডেস্ক, কল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপ, এজেন্সি প্রোফাইল ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, হজ বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল এবং হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী মোবাইল অ্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ফলে হজযাত্রীরা তাদের ভিসা, পাসপোর্ট, আবাসন, মেডিকেল সুবিধা, সৌদি আরব গমন, প্রত্যাগমন ইত্যাদি বিষয়ে সহজে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তির সাথে কাবার পথে প্রতিপাদ্য ধারণ করে ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর সাথে সরাসরি ডিজিটাল সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মধ্যসত্ত্বভোগী-প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছে। আমরা জনগণকে সময়োচিত, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা ই-হেলথ প্রোফাইল প্রবর্তন করেছি। সৌদি আরবে অসুস্থ হজযাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রদানে কিউ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু করা হয়েছে। হজযাত্রীরা কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই সৌদি ই-ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে পারছেন। মক্কা রোড সার্ভিসের আওতায় বাংলাদেশি হজযাত্রীরা এ বছর থেকে শতভাগ হজযাত্রী সৌদি পর্বের ইমিগ্রেশন ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে সম্পন্ন করতে পারবেন। ফলে জেদ্দা হজ টার্মিনালে দীর্ঘ অপেক্ষা দূর হবে।
তিনি আরও বলেন, হজ ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং-এর মাধ্যমে ফ্লাইট বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো এবং এ বিষয়ক অব্যবস্থাপনা আমরা দূর করেছি। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএস-এর মাধ্যমে হজ বিষয়ক নোটিফিকেশন প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে হজ বিষয়ক কল সেন্টার ১৬১৩৬। এই নম্বরে কল দিয়ে হজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য হাবিব হাছান, ধর্ম বিষয়ক সচিক কাজী এনামুল হাসান এনডিসি, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে দুপুর ১২টায় শেষ হয়েছে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এদিন দেশের আট বিভাগ ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ বছর ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ৪৫তম বিসিএসে ২ হাজার ৩০৯ ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪ ও প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার।