করোনাকালে বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের চেয়ে বেশি ঝরে পড়েছে ছাত্ররা

করোনাকালে ছেলে শিক্ষার্থী কমেছে বিদ্যালয়ে
করোনাকালে ছেলে শিক্ষার্থী কমেছে বিদ্যালয়ে  © ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণকালে ছাত্রীদের তুলনায় বেশি ঝরে পড়েছে ছাত্ররা। প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে এ প্রবনতা দেখা গেছে। ‘ন্যাশনাল সার্ভে অন চিলড্রেনস এডুকেশন ইন বাংলাদেশ ২০২১’ শীর্ষক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

এতে বলা হয়েছে করোনার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসা ও কোচিং মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা দৈনিক গড়ে ছয় ঘণ্টা পড়াশোনা করত। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে তা নেমে আসে দুই ঘণ্টায়। তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি ঝরে পড়ার কারণের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বিবিএসের সঙ্গে ইউনিসেফ যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করেছে। দেশের ৯ হাজার খানায় ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে গত বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়েছে হয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমিকে (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) ছেলেদের ঝরে পড়ার হার ২০১৯ সালে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২১ সালে ৬ দশমিক ৪ ছিল। মেয়েদের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে ১১ দশমিক ৭ ও ২০২১ সালে ছিল ৭ দশমিক ৮। নিম্নমাধ্যমিক স্তরে ২০১৯ সালে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার ৩ দশমিক ৫ ও ২০২১ সালে ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

মেয়েদের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে ছিল ৪ দশমিক ২ ও ২০২১ সালে ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রাথমিকেও ২০২১ সালে ছেলেরা বেশি ঝরে পড়ে।করোনার সময় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশুদের লেখাপড়ার ওপর বৈষম্যের প্রভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে।

বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময় অনলাইন বা দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে পড়াশোনা করেছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু। শহরের শিশু ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কমসংখ্যক শিশু (১৫ দশমিক ৯ শতাংশ) অনলাইনে ক্লাস করেছে।

বিবিএসের পরিচালক (ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইং) মো. মাসুদ আলম  সারাংশ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, দেশে করোনায় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল ১৮ মাস। বিবিএসের ২৬টি দল খানাগুলোয় প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছে। করোনায় দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধের কারণে স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি, বাইরে থাকা, ঝরে পড়া, শেখার ক্ষতিসহ অন্য ফলাফলের ওপর প্রভাব বুঝতে সাহায্য করবে এটি। শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে বলে জানানো হয়েছে।

বক্তারা কোন কারণে ছেলে বা মেয়েরা ঝরে পড়ল, বাল্যবিবাহের হার কেমন ছিল—এ বিষয়ে তথ্য না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে মাসুদ আলম বলেন, জরিপের মূল লক্ষ্য ছিল, করোনায় শিক্ষা পরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরা।

বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ছেলেরা বেশি ঝরে পড়ল কেন বা বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি কী, তা নিয়ে সবাই তথ্য চাইছেন। তবে বিবিএসকে শুধু তথ্য দিলেই চলবে না, গবেষণাও  করতে হবে। এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, শিখনঘাটতি কমানোর জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, ইউনিসেফ, বিবিএসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে করোনায় শিক্ষা পরিস্থিতির সামগ্রিক দিক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তা নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বেশি সহায়ক হবে।


সর্বশেষ সংবাদ