পরিকল্পিত ভাবেই বিমানের প্রশ্ন ফাঁস

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জুনিয়র পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জুনিয়র পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী  © সংগৃহীত

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জুনিয়র পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিকল্পিত ভাবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন প্রাথমিক তথ্যে গোয়েন্দারা। কীভাবে প্রশ্নফাঁস করবে, কীভাবে তা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি হবে, কোন চ্যানেলে টাকা সংগ্রহ করবে এবং কীভাবে তা বণ্টন করবে; ছক কষে এসব বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অসাধু এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জুনিয়র অপারেটর জিএসই (ক্যাজুয়াল), জুনিয়র টেইলর কাম আপহোলস্টার, প্রি প্রেস অ্যাসিস্ট্যান্ট, জুনিয়র এয়ারকন মেকানিক, জুনিয়র ওয়েল্ডার জিএসই, জুনিয়র পেইন্টার জিএসই, জুনিয়র মেকানিক (টায়ার) জিএসই, জুনিয়র এমটি মেকানিক, জুনিয়র মেকানিক জিএসই (ক্যাজুয়াল) এবং জুনিয়র ইলেকট্রিশিয়ান জিএসই (ক্যাজুয়াল) পদের নিয়োগের জন্য পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়।

এই নিয়োগের জন্য ১০০ নম্বরের এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আগেরদিন ২০ অক্টোবর রাতে বা তার আগেই নিয়োগ সংক্রান্ত এ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে; এমন আশঙ্কায় অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে মাঠে নামে গোয়েন্দারা। এক পর্যায়ে ২০ তারিখ রাতেই ১০০টি প্রশ্ন সম্বলিত প্রশ্নপত্র পেয়ে যায় গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার একাধিক টিম শুক্রবার (২১ অক্টোবর) উত্তরার বিমানবন্দর কাউলা এলাকায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাঁচ জন জুনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতাররা হলো, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমটি অপারেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এমটি অপারেটর মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া (৩১), এমটি অপারেটর মো. এনামুল হক (২৭), অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন (২৯) এবং অফিস সহায়ক হারুনুর রশিদ (৪০)।

বিমানের-প্রশ্নফাঁসে-গ্রেফতার

এ সময় তাদের কাছ থেকে ফাঁসকৃত প্রশ্নের সফট ও হার্ডকপি, মোবাইল ফোন, নগদ দেড় লাখ টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত দলিল, হিসাব-নিকাশের চারটি ডায়েরি এবং বিভিন্ন প্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

গোয়েন্দারা বলছেন, প্রশ্ন প্রণয়ন, প্রিন্টিং এবং তা সংরক্ষণ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে থাকা আসামিরা প্রশ্নের হুবহু কপি সংগ্রহ করে সরাসরি অথবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে। নির্দিষ্ট চাকরি প্রার্থীদের বিপুল টাকার বিনিময়ে প্রশ্নের সমাধান মুখস্থ করিয়ে তাদের চাকরি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে। প্রশ্ন ফাঁস দেওয়া এবং প্রশ্নপত্র দিয়ে উত্তরপত্র মুখস্থ করানো বাবদ ভিন্ন ভিন্ন অংকের টাকা গ্রহণ করে এই চক্রটি।

আরও পড়ুন: স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

জাতীয় পতাকাবাহী অতি সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থাটিতে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নগদ লাখ-লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ও টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে চাকরি নিশ্চিত করার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত জায়গা জমি লাখ-লাখ টাকা লিখে নিতো চক্রটি। প্রথম দিকে ৭ লাখ টাকায় পরবর্তী সময়ে সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকায়ও প্রশ্ন বিক্রি করা শুরু করে তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, কীভাবে কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢালাওভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো তার রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য আসামিদের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষা কমিটির সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় কমিটি এড়াতে পারে না। পরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনার জন্যই ডিবি পুলিশ প্রতিটি পরীক্ষার আগেই নিবিড় তদারকি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও আমরা তথ্য পেয়ে থাকি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করি। গুটিকয়েক লোকের হাতে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায় তাহলে এখানে মেধাবীদের আসার সম্ভাবনা একদমই কমে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ