নূহাশ হুমায়ূনের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে যদি হুমায়ূন আহমেদ লিখতেন

হুমায়ুন আহমেদ ও নূহাশ  হূমায়ুন
হুমায়ুন আহমেদ ও নূহাশ হূমায়ুন   © টিডিসি ফটো

নূহাশের সাম্প্রতিক একটা বক্তব্য নিয়ে খুব ঝড় হচ্ছে। আমি ঝড় পছন্দ করা মানুষ। ঝড় হলে আমি একটা জানলা খুলে দিতাম। বাতাসের শক্তি দেখতাম। বৃৃষ্টি দেখতাম। মাঝে মাঝে হাত বাড়াতাম। আমার হাত ভিজে যেতো। ভেজা হাত আমার ভালো লাগে।
ভেজা হাত নূহাশের ভালো লাগতো না। ছোটবেলায় সে কোথা থেকে তোয়ালে বা কাপড়ের টুকরো এনে হাত মুছে দিতো।

আমি মুগ্ধ হয়ে তার মুছে দেওয়া দেখতাম। সে মুছে দিয়ে কাপড়টা রাখতে গেলেই আমি আবার জানলার বাইরে হাত বাড়াতাম। হাত ভেজাতাম। নূহাশ আবার সেটা দেখে কাপড় নিয়ে আসতো। পরম মমতায় হাত মুছে দিতো। আমি আবারও মুগ্ধতা নিয়ে সেই হাত মোছা দেখতাম।

নূহাশ বড় হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক এই ঝড়ে তার হাত ভিজে গেছে। আমি কাপড় খুঁজছি তার হাতটা মুছে দেওয়া দরকার। আশ্চর্য ব্যাপার নুহাশকে পাচ্ছি না। সে বিষয়টা নিয়ে খুব বিব্রত। বিরক্ত। 

হয়তো বাসায় একা বসে আছে। কারো সাথে দেখা করছে না। ভেজা হাত নিয়ে বসে আছে নূহাশ এটা আমার ভালো লাগছে না। তার হাতটা মুছে দিতে ইচ্ছে করছে।

আরও পড়ুন: ‘বাবার সঙ্গে মাকে নিয়েও প্রশ্ন করুন’

কিন্তু ব্যাক্তি নূহাশ এখন অনেক সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারছে। সে যেহেতু দেখা করতে চাচ্ছে না, তাই আমিও যেতে পারছি না।
এমন সময় আসে বাবাদের জীবনে। পুত্ররা যত সহজে বাবার কাছে যেতে পারে। বাবা ততটা সহজে পুত্র’র কাছে যেতে পারে না। 
এটা প্রকৃতির অদ্ভুত এক নিয়ম। 

এই নিয়মে আমি আছি। এই নিয়মে নূহাশও আটকা পড়বে। প্রকৃতি এভাবেই বাবাদের একটা রেললাইন করে দিয়েছে। পেছনে ফেরার উপায় নাই। নূহাশ আমার পরিচয়ে পরিচিত হতে চায় না জেনে আমি যথেষ্ট আনন্দিত হয়েছি।

আমার বাবাও চাইতেন আমরা যেনো নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারি। আমার ছেলে সেটা চাইলে আমি দোষের কিছু দেখি না।
কিন্তু এই ঘটনায় অনেকে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, কষ্ট পাচ্ছেন। এটা ঠিক না। 

নূহাশের বলার ধরণ হয়তো একটু অন্যরকম ছিলো। ছোট মানুষ। বলতেই পারে। আর সবার ধরণ তো একরকম হয় না। হবে না।
ব্রায়ান লারার মতো তো আর টেন্ডুলকার ব্যাটিং করবে না। কিংবা টেন্ডুলকারের মতো আমাদের সাকিব আল হাসান।
মেসি আর রোনালদো একই রকমভাবে ফুটবল খেলবে না। অবশ্যই সবাই আলাদা। 

পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে। কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।নূহাশ পেরেছে। সে বেশ কয়েকটা ফিল্ম বানিয়েছে। ভালো লেগেছে। আমি চাই সে তার মতো করে এগিয়ে যাক। আমাকে একসময় মানুষ বলুক, বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা নূহাশের পিতা হুমায়ূন আহমেদও এক সময় লেখালেখি করে সামান্য খ্যাতি অর্জন করেছিলো।

তবে নূহাশের ঝড়ে মানুষ দেখলাম দুইভাগ হয়ে গেছে। একদল নূহাশের ভেজা হাত মুছে দিতে চাইছে। আরেকদল আর পানি দিয়ে হাতটা আরও ভিজিয়ে দিতে চাইছে। বিষয়টা ঠিক হচ্ছে না।

তবে একটা কথা বলতে চাই, কখনো কখনো তোমার মুখটা বন্ধ রাখতে হবে। গর্বিত মাথাটা নত করতে হবে এবং স্বীকার করে নিতে হবে যে তুমি ভুল। এর অর্থ তুমি পরাজিত নাও, এর অর্থ তুমি পরিণত এবং শেষ বেলায় জয়ের হাসিটা হাসার ন্য ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এতো কিছুর পরও আমার নূহাশের কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। তার ভেজা হাতটা মুছে দিতে ইচ্ছে করছে। যেতে পারছি না। বিষয়টাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না। বাবাদের এই সমস্যা, অনেক সময় নিজেদের কষ্টও নিজেরা ধরতে পারে না...

লেখক- কথা সাহিত্যিক 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence