মাকড়শাভীতি বা এরাকনোফোবিয়া নামটির পেছনের রহস্য কী?

লেখক ও প্রতীকী ছবি
লেখক ও প্রতীকী ছবি  © শেখ শাকিল হোসেন

একটি আটপেয়ে পোকা আপনার গায়ের উপর কিলবিল করে হাঁটছে, ব্যাপারটি ভাবতেই গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে উঠলো, তাইনা? যদি না উঠে থাকে, তবে আমার মতে আপনি অনেক সাহসী! আর আমি যেই পোকাটির কথা বলছিলাম, সেটি হচ্ছে মাকড়সা। আমরা সবাই-ই এটিকে কমবেশি ভয় পাই, কিন্তু যখন এই ভয়ের মাত্রাটি তীব্র পর্যায়ে চলে আসে, তখন সেটিকে বলা হয় মাকড়শাভীতি বা এরাকনোফোবিয়া! আমরা সকলেই জানি ফোবিয়া মানে ভীতি, কিন্তু এরাকনো শব্দটির মূল কী? এরাকনো শব্দটি এসেছে আসলে 'এরাকনি' থেকে। আর এই নামের রহস্য জানতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে গ্রীক পুরাণের রাজ্যে!

এরাকনি ছিল এক কারিগরের কন্যা, যার হাতে ছিল অসাধারণ এক আশীর্বাদ। তার বুননক্ষমতা ছিল অতুলনীয় যা দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দিত নশ্বর মানুষ, এমনকি জলের নিম্ফরাও! অবিনশ্বর দেবদেবীদের নিকটও অজানা ছিল না অসাধারণ গুণসম্পন্ন এই আশ্চর্যময়ীর কথা। কিন্তু তার এই অসম্ভব খ্যাতি তাকে দাম্ভিক করে তুলেছিল, সে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে তার এই ক্ষমতা দেবতাদেরই দান! সে দেবতাদের থেকেও নিজেকে উচ্চাসনে স্থান দিয়েছিল- আর এই খবরটি পৌঁছে যায় দেবী এথিনার কানে। এথিনা হলেন সেই দেবী যিনি মানুষকে দান করেন বুননশিল্প ও চাষ করার জ্ঞান। 

এক বিকেলে এরাকনি নিত্যদিনকার মত তার নিপুণ বুননশিল্পে রপ্ত ছিল আর সাধারণ মানুষ ভিড় করে কৌতুহলের সাথে তা উপভোগ করছিল। এমন সময় এক বুড়ি বলে উঠলো, "তোমায় এমন সুন্দর বুননকৌশল কে শেখাল, বাছা?" এরাকনি বলল, "আমি নিজের পরিশ্রমে এ কাজ শিখেছি, কেউ আমাকে শেখায়নি!" তৎক্ষণাৎ এথিনা তাঁর প্রকৃত রূপে আবির্ভূত হলেন! কিন্তু এতেও এরাকনি কোনোভাবেই হার মানতে রাজি হল না, অবশেষে দেবী এথিনা তাকে প্রস্তাব দিলেন এক প্রতিযোগিতার, যার মাধ্যমেই শ্রেষ্ঠত্ব যাচাই হবে। এরাকনিও এতে অনতিবিলম্বে রাজি হয়ে গেল।

তো প্রতিযোগিতার দিন সারা গ্রামের লোকজন ভিড় করল এই অভূতপূর্ব ঘটনা উপভোগ করবার জন্য। সময়মত শুরু হল ট্যাপেস্ট্রি বুনন, চারদিকে টানটান উত্তেজনা। এথিনা তাঁর স্বর্গীয় উপকরণ আর হাতের জাদুর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললো দেবতাদের মহত্বের চিত্র, সবাই তা দেখে অভিভূত হয়ে গেল। কিন্তু ওদিকে এরাকনি ফুটিয়ে তুললো দেবতাদের অন্যায়, অবিচার ও কুকর্মের চিত্র। এথিনা এই সৃষ্টির দিকে তাকিয়েই বুঝে গেলেন এরাকনিকে হারানো কোনোভাবেই তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, এত সূক্ষ্ম ও সুনিপুণ কারুকাজ তিনি আর কক্ষনো দেখেননি। কিন্তু এ তো হতে পারে না! একটি সাধারণ মেয়ের কাছে একজন দেবী কিছুতেই হারতে পারেন না! মুহূর্তে এথিনার অভিশাপে এরাকনি পরিণত হল আটপেয়ে এক অদ্ভূত কীটে, যেটিকে আমরা আজ মাকড়সা বলে থাকি। আমরা আমাদের ঘরের দেয়ালে, বইখাতার স্তূপে যত মাকড়সা দেখে থাকি, ওদের সকলের জন্মের মূলেই রয়েছে আসলে ওদের মা এরাকনি, যার সুনিপুণ বুননকৌশল ওরা আজও বহন করে যাচ্ছে, আর আমাদের অভিভূত করে যাচ্ছে ওদের শিল্পকর্ম দিয়ে!

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence