উমামা ফাতেমা: বাজির দান না লস প্রজেক্ট?

সাদিক মাহবুব ইসলাম
সাদিক মাহবুব ইসলাম  © টিডিসি সম্পাদিত

গত শুক্রবার থেকে ঘটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের হলে কমিটি ইস্যুতে বেশ কয়েকটা ইন্টারেস্টিং মোড় আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুকেন্দ্রিক রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ মেরূকরণ শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে ঘটে গেছে। ছাত্রদলের কমিটির বিরুদ্ধে মব তৈরির পিছে মূল শক্তি ছিল তিনটি-শিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) আর উমামা ফাতেমা। রাত পর্যন্ত তিন পক্ষ মিলে মিশে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। 

উমামার পোস্টের পর পর রোকেয়া হলে নারীদের মোবিলাইজ করে আন্দোলনে পেট্রোল ঢালে প্রথম শিবির, সেই পেট্রোলে আগুন দেয় উমামা আর আগুনে বাতাস দেয় বাগছাস। এরপর হলে হলে আন্দোলন শুরু হয়, জুলাই নামানোর একটা ড্রামা হয়। এরমধ্যে ঘটে যায় আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ মোড়। যেই মুহূর্টে শিবিরের দেয়া পানির ফিল্টার ভাঙা হয়, তখনই শিবিরের সুর যায় পাল্টায়। এরপর শিবিরের নেতাকর্মী, সমর্থকরা সুর পাল্টাতে থাকে, তাদের পেজগুলা বাগছাস আর উমামাকে ফোকাস করতে থাকে। রাতের মধ্যে নতুন ন্যারেটিভ চলে আসে-দায় সব উমামা/বামদের। তারা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই ন্যারেটিভ বাজারে ছেড়ে দিয়ে শিবির হাত ধুয়ে ফেলে। পানির ফিল্টার ভাঙার পর কিন্তু শিবির আন্দোলনের আর নেই। 

এর মাঝে উমামা একটা বিরাট ব্লান্ডার করল ছাত্রদলের কমিটি বাতিল আর শিবিরের কমিটি প্রকাশ্যে আনতে দিয়ে। এর ফলে ছাত্রদলের লোকজন অত্যন্ত সুন্দর একটা কাউন্টার দিল-যার বিয়ে হয়েছে তার ডিভোর্স দেয়া লাগবে, আর যার বিয়ে হয় নাই তার বিয়ে করা লাগবে? আর শিবির ততক্ষণে উমামার বিরুদ্ধে চলেই গেছে। এরপর সকালে বাগছাসও দেখলাম সুর নরম করে আসছে। কাদের খুব স্মার্টলি সকালে শিবিরের কমিটি নিয়ে আলাপ দিল। শিবিরকে আর ক্লিনচিট দিয়েছে না তারা, এরকম মেসেজ দেয়ার চেষ্টা। এটা সফল হইল কিনা সেটা ভিন্ন আলাপ। অ্যাপ্রোচটা ভালো। 

এরপর ফরহাদ ভাই দান মেরে দিলেন-শিবিরের কমিটি আমি দিব না উমামা দেবে? শিবির কিন্তু এই আন্দোলন থেকে হাত উঠিয়ে ফেলছে সকালেই। উনি কিন্তু ডাকসুর ডেট নিয়ে বদ্ধপরিকর। 

এখন উমামার হইল আল্টিমেট লস। একটা ভুল চালে সে এখন বন্ধুশূন্য হয়ে গেছে। খুবই সিম্পল একটা কৌশলের কারণে সে তার কোর ভোটার বেইজ ছাড়া আর সব স্ট্র্যাটেজিক মিত্রকে হারিয়ে ফেলে। ডাকসুর ভোটের রাজনীতিতে উমামার দরকার জোট। পপুলিস্ট পদক্ষেপটা কাজে লাগত যদি উমামার কোর ভোটার বেইজ বড় হতো। ওর মিডিয়া আর অনলাইন প্রেজেন্স খুব ভালো। কিন্তু তার পপুলার সাপোর্ট সেই হিসাবে কম। 

বামপন্থীরা এখন তারে পপুলিস্ট বলছে, শিবির/ডানপন্থীরা পুরা মবের দায় উমামাকে দিয়ে হাত ধুয়ে দিল, আর ছাত্রদল তো তার বিরুদ্ধে আছেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-বৈছাআর ইস্যুতে উমামা যেটুকু পলিটিকাল লেভারেজ অর্জন করেছিল, ওটাও মোটামুটি শেষ। এবং ডাকসুর ভিপি হওয়ার জন্য যে সে একটা ভালো রেসে ছিল, সেটায় পিছিয়ে গেল। শুক্রবার রাতেই তারেক ভাইকে বলছিলাম-ওর মুভ ব্যাকফায়ার করতে পারে। এবং সেটাই করল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।  

সবচেয়ে ভালো রিয়্যাকশন দিয়েছে ছাত্রদল। শুক্রবার রাতে মব যখন চলতেছে, ভিসি চত্বরে তারা গানবাজনা করছিল। শনিবার তালি মিছিল বের করেছে। সুন্দর রিয়্যাকশন। তাদের শুক্রবার এত উসকানি দিয়েও ভায়োলেন্সে আনা যায়নি। ঢাবিতে ৫ আগস্টের পর থেকে সবচেয়ে স্মার্ট পলিটিক্স করা ছাত্রদল তার সিলসিলা ধরে রাখলো।

কিন্তু এখন একটা কন্সপাইরেসি থিওর। অকামস রেজর বলে, যেইটা স্টুপিডিটি দিয়ে এক্সপ্লেইন করা যায় সেটাকে কন্সপাইরেসি বানানোর প্রয়োজন নাই। কিন্তু গতকাল যদি উমামার বিরুদ্ধে প্ল্যান করে পলিটিক্সটা খেলা হয়ে থাকে, সেটা হবে ৫ আগস্টের পর ঢাবির রাজনীতিতে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট পলিটিক্স। চাণক্য স্টাইল পুরো। সবাই স্ট্যাটাস-কোতে ফিরে যাইতেছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। ফরহাদ ভাই যেভাবে বলেছেন, রাতারাতি ইস্যু তৈরিও হয়, রাতারাতি সলভও হয়ে যায়। মাঝখান থেকে দাবার ভুল চালে ক্যাজুয়ালটি হলো উমামা ফাতেমা। 

লেখক: সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence