সরকারি নিয়ন্ত্রণে আসছে কওমি মাদ্রাসা, ডাটাবেইজ প্রস্তুত

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় রাজনীতিতে যুক্ত করা ও সহিংসতায় ব্যবহারের অভিযোগের পর গত বছর সব মাদ্রাসা নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে একটি কাঠামোয় ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি ডাটাবেইজও তৈরি করা হয়েছে। 

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণে কওমি শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খসড়াটি পরিমার্জনের কথা বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ নিয়ে শিক্ষা আইনের যে খসড়া পুনর্গঠন করা হচ্ছে তাতে কওমি থাকছে গুরুত্বের সঙ্গে। আইন সম্পন্ন হলে কওমি শিক্ষা পুরোপুরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আরও পড়ুন: ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮টিতেই নেই ভিসি-কোষাধ্যক্ষ

কওমী মাদ্রাসার বিষয়ে এমন উদ্যোগের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে পুলিশের। কওমী মাদ্রাসার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজত কাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সফল করার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল।

আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলন এবং গত বছর মামুনুল হককে গ্রেফতারের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে সহিংসতা চালানো হয়।

ওই ঘটনার পর বিভিন্ন মহল থেকে কওমি শিক্ষাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি ওঠে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন উপলক্ষে গত বছর ৩ মে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায়ও কওমি শিক্ষাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানানো হয়।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর যে শিক্ষা ভাবনা ছিল, তার গঠিত ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের যে শিক্ষা আমরা পাই, তার আলোকে ২০১০ সালে আমরা যে শিক্ষানীতি করেছি, তা অনুসরণ করার চেষ্টা আমরা করছি। তার বিপরীতে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি অংশ বিশেষত কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কওমিদের যে কর্মকাণ্ড সেগুলো সকল আলোচকের মাধ্যমে ওঠে এসেছে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যেকোনও শিক্ষাই হোক, সেখানে যদি মানবিকতার শিক্ষা না দেওয়া হয়, সমাজ সম্পর্কে শেখানো না হয়, দেশের প্রতি ভালোবাসা শেখানো না হয়, শিক্ষার্থীরা পরমতসহিষ্ণুতা যদি না শেখে, তাহলে তাকে শিক্ষা বলা যায় না। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে চালাবেন তার চেয়ে বড় হচ্ছে মানবিকতার বিষয়গুলো অবশ্যই থাকতে হবে।

এ বিষয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা চাই শিক্ষার মূল ধারায় কওমিসহ সব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হোক। আর সে কারণেই একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নীতিমালা তৈরির জন্য ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: অক্টোবরের পর একদিনে সর্বাধিক মৃত্যু

কওমী মাদ্রাসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। গত ২৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কওমি মাদ্রাসাগুলোকে একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা প্রয়োজন। কওমি মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকরণ এবং সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রয়োজন রয়েছে।

এদিকে, কওমি, নুরানী, দীনিয়া, ফোরকানিয়া ও ইবদায়িসহ সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ডাটাবেইজও প্রস্তুতও করা হয়। ডাটাবেইজ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৯ হাজার ১৯৯টি। এর আগে ২০১৫ সালের হিসাবে, সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ।

এ বিষয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা চাই শিক্ষার মূল ধারায় কওমিসহ সব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হোক। আর সে কারণেই একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নীতিমালা তৈরির জন্য ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ