১৫ বছর ধরে নেই ফুল টাইম শিক্ষক, অতিথি শিক্ষক দিয়েই চলে ঢাকা আলিয়ার পাঠদান

সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন প্রিন্সিপাল

সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া
সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া  © সম্পাদিত

ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়াকে ধরা হয় বাংলাদেশের প্রাচীন আলিয়া মাদ্রাসা হিসেবে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে আলিয়া মাদ্রাসা কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। দেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় এক সময়ে অসামান্য অবদান রাখা এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে অনেকটা নাম স্বর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জানা যায়, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাদ্রাসাটির মাধ্যমিক সেকশনে (ষষ্ঠ থেকে দাখিল) নেই কোন স্থায়ী শিক্ষক। ৯ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। 

‘আমাদের দেশে ইতঃপূর্বে যত সরকার এসেছে তারা কেউই মূলত সিরিয়াসলি মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নতি নিয়ে ভাবেনি। বরং দিনের পর দিন, মাদ্রাসা পড়ুয়াদের কোণঠাসা করার পাঁয়তারা চলেছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এই অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে। যার ফলাফল ঢাকা আলিয়ার আজকের এই পরিস্থিতি -মশিউর রহমান, কামিল শ্রেণির শিক্ষার্থী 

মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের গুরুত্বের অভাবেই প্রতিষ্ঠানটির এই দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু মাধ্যমিক নয়, স্নাতক স্নাতকোত্তর পর্যায়েও নেই উল্লেখযোগ্য শিক্ষক। সংকট কাটাতে আগে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক আনা গেলেও বর্তমানে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, বছরের পর বছর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়গুলো অবগত থাকলেও তেমন কোন সমাধান করতে পারেনি। 

এদিকে সম্প্রতি গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা হারানোর পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুর রশীদ পদত্যাগ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। 

আরও পড়ুন: আলিয়া মাদ্রাসাকে ‘ঢাকা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ করার দাবি

মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কামিল শ্রেণীতে পড়ুয়া মশিউর রহমান নামের একজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের দেশে ইতঃপূর্বে যত সরকার এসেছে তারা কেউই মূলত সিরিয়াসলি মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নতি নিয়ে ভাবেনি। বরং দিনের পর দিন, মাদ্রাসা পড়ুয়াদের কোণঠাসা করার পাঁয়তারা চলেছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এই অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে। যার ফলাফল ঢাকা আলিয়ার আজকের এই পরিস্থিতি।

মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের গুরুত্বের অভাবেই প্রতিষ্ঠানটির এই দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু মাধ্যমিক নয়, স্নাতক স্নাতকোত্তর পর্যায়েও নেই উল্লেখযোগ্য শিক্ষক। সংকট কাটাতে আগে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক আনা গেলেও বর্তমানে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী, সাধারণ শিক্ষার মাঝে বিরাজমান ব্যবধান কমিয়ে আনাসহ গুণগতমান উন্নয়ন ও সুষ্ঠুরূপে পরিচালনা, তদারকি, পরিবীক্ষণ ও অ্যাকাডেমিক পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদারকল্পে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর যাত্রা শুরু করে। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও ঢাকা আলিয়া নিয়ে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন মাদ্রাসাটির সহযোগী অধ্যাপক মো: শাহজালাল। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, গত ১৫ বছর যাবৎ আমাদের এভাবেই চলতে হচ্ছে। বিষয়গুলো সবাই অবগত, কিন্তু এটা কখনো সমাধান হয়নি। সংকট নিরসনের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু এরপরেও অনেক সময় আমরা যারা সিনিয়র শিক্ষক রয়েছি আমাদেরকেও নিচের দিকে ক্লাস নিতে হয়। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কষ্ট হলেও শিক্ষকরা এগুলো ম্যানেজ করে নেয়। 

মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার উপাধ্যক্ষ মো: আশরাফুল কবীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ২০২৩ সালে যোগদানের পর থেকে এ বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। এমনকি সমস্যাটা অনেক পুরোনো। আমরা বার বার এ সমস্যা সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিচ্ছি। তবে কবে নাগাদ এটার সমাধান হবে আমরা সেটা জানি না। 

আরও পড়ুন: নর্থ সাউথে স্বেচ্ছাচারী-দুর্নীতিপরায়ণ ট্রাস্টিদের পুনর্বাসন হচ্ছে?

সমস্যা সমাধানে কতদিন থেকে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারবেন। একইরকম সমস্যা রয়েছে আমাদের অনার্স সেকশনেও। এসব কারণে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু আমরা অতিথি শিক্ষক নিয়ে দিয়ে সেটা সমাধানের চেষ্টা করি। আমি মনে করি, এটার সুষ্ঠু সমাধান হওয়া জরুরি। 

এদিকে সমস্যার বিষয়গুলো অবগত থাকলে নিজেদের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়গুলো কিছু জটিলতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে। আবার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাসমূহে শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসায় বাড়তি বিড়ম্বনা থেকে যায়। 

সরকারি আলীয়া মাদ্রাসাগুলোতে ক্যাডার ব্যতীত অন্য খালি পদগুলো পূরণের জন্য আমরা নিয়োগবিধি প্রণয়ন করছি। এগুলো হয়ে গেলে আশা করছি সংকট দূর হবে -হাবিবুর রহমান, মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর

১৫ বছরেরও বেশি সময় থেকে স্থায়ী শিক্ষক না থাকার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আলাদা হওয়ার পর থেকেই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়গুলো নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। কারণ এখানে যারা আসেন তারা শিক্ষা ক্যাডার থেকে আসেন। আর নিচের ক্লাসে সমস্যা হলো তাদের নিয়োগ বিধি নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। আমরা ইতোমধ্যে মাউশির মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষক দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। 

হাবিবুর রহমান আরও বলেন, আগে চাইলেই অন্য বিভাগ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। আরেকটি দিক হলো সরকারি আলীয়া মাদ্রাসাগুলোতে ক্যাডার ব্যতীত অন্য খালি পদগুলো পূরণের জন্য আমরা নিয়োগবিধি প্রণয়ন করছি। এগুলো হয়ে গেলে আশা করছি সংকট দূর হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence