নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ দিবস আজ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৯, ১০:১০ AM , আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯, ১০:১০ AM
তিনি ছিলেন পাঠক তৈরির কারিগর। ছিলেন কথার জাদুকর। তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ তার পাঠক। তিনি আজ বেঁচে নেই কিন্তু এখনও লাখো পাঠক তার জন্য কাঁদেন। তিনি নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ।
‘জ্যোৎস্নাপ্রীতি’ তাঁর পাঠকদের কাছে অপরিচিত নয়। পূর্ণিমা চাঁদ বা জ্যোত্স্না রাত নিয়ে তাঁর ছিল প্রবল হাহাকার ও ভাবাবেগের বিষয়। তাঁর অসংখ্য রচনায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে অনেকবার।
গভীর আবেগ ও আর্তিভরা পঙিক্ততে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন ‘ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়/চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’। গানের কথা অনুসারে জ্যোৎস্না রাতে মৃত্যুবরণে তাঁর সেই আকুতি সৃষ্টিকর্তা শোনেননি। ঠিক সাত বছর আগে আজকের এ দিনটিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দিনের আলোয়। আর নিজের দেশেও সেই রাতটি ছিল ঘোর অমানিশার। জ্যোত্স্নার মতো বৃষ্টিও ছিল তাঁর সমান প্রিয়।
বাংলা সাহিত্যের এ জনপ্রিয় লেখককে যেদিন নুহাশপল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয়, তখন শাল-গজারির পাতার ফাঁক গলে টুপটাপ ঝরেছিল বৃষ্টির ফোঁটা। শ্রাবণে বর্ষণমুখর দিনে আবার ফিরে এলো তাঁর বিদায়ের দিন। আজ ১৯ জুলাই শুক্রবার। বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদের সপ্তম প্রয়াণ দিবস।
পাঠকনন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণে পুরো দেশে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় ২৩ জুলাই। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু-পুষ্প ও ভালোবাসায় সিক্ত হন জননন্দিত এই লেখক-নির্মাতা। পরদিন তাঁকে সমাহিত করা হয় তাঁরই গড়া নন্দনকানন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।
জীবদ্দশায় তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই পড়ার জন্য পাঠকের আগ্রহও ছিল অনেক। গ্রন্থমেলায় তাঁর প্রকাশিত বই বিক্রিও হতো প্রচুর। লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৃত্যুর সাত বছর হয়ে গেলেও তাঁর প্রতি ক্রেতা-পাঠকের ভালোবাসার কমতি নেই। আগ্রহেরও কমতি নেই।
হুমায়ূন আহমেদকে বিস্ময়কর প্রতিভা হিসেবে বর্ণনা করে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক গতকাল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ বিস্ময়কর লেখক। তাঁর ছাত্রাবস্থায় লেখা দুটি উপন্যাস পড়ে বিস্মিত হতে হয়। গভীর জীবনবোধ, ভাষা ও নতুনত্বে তিনি যে মুনশিয়ানা দেখিয়েছিলেন, সেটা সবাইকে বিস্মিত করে।’
অনেকেই মনে করছেন জীবদ্দশায় তাঁর বইয়ের প্রতি যে পাঠকজোয়ার ছিল, মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে সেখানে লেগেছে ভাটার টান। এ সম্পর্কে আনিসুল হক বলেন, ইতিহাস বলে সময় ও রুচি সব সময়ই পাল্টায়। সেটাই সত্য। জীবদ্দশায় হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের ব্যাপক কাটতি ছিল। ধীরে ধীরে তা কমতে বাধ্য। কেননা তাঁর আর নতুন কোনো বই প্রকাশের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তাঁর ক্লাসিক ধারার বইগুলো দীর্ঘদিন পঠিত হবে। পাঠকের আগ্রহে থাকবে।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ প্রায় একাই বিশাল পাঠকগোষ্ঠী তৈরি করে গেছেন। আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে চাঙ্গা করে গেছেন। শুধু বই নয়, নাটক ও চলচ্চিত্র জগতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর বইয়ের প্রতি এখনো যেমন মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়েনি, একই সঙ্গে সাহিত্যবিচারেও তা টিকে থাকবে বলে মনে করি। তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন, আছেনও।’
হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের অন্যতম প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের প্রতি পাঠক-ক্রেতার আগ্রহ মোটেও কমেনি। ক্ষেত্রবিশেষে তা বেড়েছে। তাঁর নতুন বই বের হলেই ৫০ বা ৬০ হাজার কপি বিক্রি হতো। এখন নতুন বই বের হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তাঁর পুরনো বইগুলোরও কাটতি বেশ রয়েছে।’
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে রয়েছে নানা আয়োজন। দিনটি উপলক্ষে সকাল থেকে কোরআনখানির আয়োজন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে এলাকার শিশুদের খাওয়ানোর আয়োজন রয়েছে আজ। এ ছাড়া প্রকাশকরা নুহাশপল্লীতে এ কথাশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানা গেছে।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তাঁর ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।