অমর একুশে গ্রন্থমেলা
রঙের লেপন, পেরেক-হাতুড়ির টুংটাং—শব্দের উৎসবের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে
- তাওসিফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৬ AM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:১৪ AM
ফেব্রুয়ারি আসছে—বইয়ের মাস, শব্দের উৎসব। ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া একুশের চেতনায় সেজে উঠছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ। প্রতিটি ইট, প্রতিটি পেরেক যেন গেঁথে দিচ্ছে জ্ঞান, সৃজনশীলতা আর আবেগের এক অনন্য মেলবন্ধন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা ওঠার আর মাত্র দুই দিন বাকি। স্টল নির্মাণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রকাশক, নির্মাণশ্রমিক, শিল্পী ও কারিগরেরা। রোদ মেখে, ধুলো উড়িয়ে, হাতুড়ির আঘাতে তৈরি হচ্ছে জ্ঞানের মন্দির।
রঙ, কাঠ, আর পেরেকের গল্প
বুধবার বিকেলে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ধুলোমাখা ব্যস্ততা। কাঠ, কার্ডবোর্ড আর রঙের গন্ধ মিশে আছে বাতাসে। কেউ মইয়ে দাঁড়িয়ে তুলির আঁচড়ে দিচ্ছেন রঙের প্রাণ, কেউবা পেরেক ঠুকে গড়ছেন স্বপ্নের কাঠামো।
এখন শুধু অপেক্ষা বইয়ের গন্ধে ভেসে যাওয়ার, পাঠকের প্রাণের স্পন্দনে মেলা প্রাঙ্গণ সজীব হওয়ার। একুশে গ্রন্থমেলা শুধু বই বিক্রির আয়োজন নয়—এ এক অনুভূতির মহোৎসব, যেখানে শব্দেরা খুঁজে নেয় বেঁচে থাকার অর্থ, চিন্তার মুক্তি আর ভালোবাসার অমরত্ব।
লাল, নীল, সাদা, হলুদ—রঙের ক্যানভাসে রাঙানো হচ্ছে বইয়ের স্টলগুলো। প্রতিটি কাঠের টুকরো যেন হয়ে উঠছে সৃজনশীলতার প্রতিচ্ছবি। পেরেকের টুংটাং শব্দে মুখরিত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান—যেন নতুন গল্পের জন্ম নেওয়ার প্রতিধ্বনি।
শ্রমিকদের গড়া স্বপ্ন
করাতের শব্দের মাঝে মনের সুখে কার্ডবোর্ড কাটছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব ইবরাহিম। সঙ্গে আছেন হাবিবুল আবদাল। আটদিন ধরে পরিশ্রম করছেন তাঁরা।
ইবরাহিম বললেন, “এই স্টলসহ আটটা স্টলে কাজ করছি। প্রথমবার না, সাত-আট বছর ধরে এই মেলায় কাজ করি। আমার কাকা দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই কাজ করেন। তিনি-ই আমায় প্রথম এখানে নিয়ে আসেন।”
হাবিবুল জানালেন, কাঠের কাজ শেষ হলেই রঙের ছোঁয়া লাগবে স্টলগুলোর গায়ে।
“এবারের মেলায় নতুন ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে থাকা প্রকাশনা সংস্থাগুলো এবার জায়গা পেয়েছে। আশা করি, এবারের মেলা নতুন এক আবহ তৈরি করবে। আমাদের স্টল বাংলা একাডেমিতে হলেও, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে পুরো মেলায় কাজ করব” — রিফ ওসমান হাদি, মুখপাত্র, ইনকিলাব মঞ্চ
অন্যদিকে, অনিন্দ্য প্রকাশের স্টলে বাতি লাগাচ্ছিলেন আব্দুর রহমান। তাঁর কণ্ঠে ক্লান্তি থাকলেও চোখে স্বপ্নের দীপ্তি—“কিছু ইলেকট্রিক্যাল কাজ বাকি, রঙের কাজও বাকি। তবে কালকের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”
গত বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশের গেইট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করতে হাতের ডান পাশে থাকবে লিটল ম্যাগ কর্নার।
৭২৩ নম্বর স্টলে প্রত্যয় প্রকাশনের ব্যানার লাগাচ্ছিলেন দুই তরুণ। এক সপ্তাহের শ্রমে তৈরি হওয়া তাঁদের স্টলে খুব শিগগিরই উঠবে বইয়ের গন্ধ।
পুরো মেলায় জুলাই স্পিরিট
বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে স্টল বরাদ্দ পেয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ। মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বললেন, “এবারের মেলায় নতুন ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে থাকা প্রকাশনা সংস্থাগুলো এবার জায়গা পেয়েছে। আশা করি, এবারের মেলা নতুন এক আবহ তৈরি করবে।”
তিনি আরও বললেন, “আমাদের স্টল বাংলা একাডেমিতে হলেও, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে পুরো মেলায় কাজ করব।”
প্রস্তুতি ও প্রতীক্ষার শেষ প্রহর
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মেলার সার্বিক বিষয় জানাবেন বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও মেলা প্রস্তুতি কমিটি।
এখন শুধু অপেক্ষা বইয়ের গন্ধে ভেসে যাওয়ার, পাঠকের প্রাণের স্পন্দনে মেলা প্রাঙ্গণ সজীব হওয়ার। একুশে গ্রন্থমেলা শুধু বই বিক্রির আয়োজন নয়—এ এক অনুভূতির মহোৎসব, যেখানে শব্দেরা খুঁজে নেয় বেঁচে থাকার অর্থ, চিন্তার মুক্তি আর ভালোবাসার অমরত্ব।