অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সহজে ডেকে আনবে মৃত্যু
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৫৬ PM , আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৪৬ PM
অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য অত্যন্ত জরুরী একটি ওষুধ। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার করলে দেহের রোগ- জীবাণু ধ্বংসে আর সেই ওষুধ কাজ করে না। বরং তারা আরও শক্তিশালী হয়ে সেই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবে এই ওষুধটি দেহের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য অকার্যকর হয়ে পড়ে। অর্থাৎ এটি তখন শরীরের রোগ সারাতে ব্যর্থ হবে। এভাবে ব্যবহার করতে থাকলে একসময় সব অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের জন্য অকেজো বা ব্যর্থ হয়ে যাবে। এসব অ্যান্টিবায়োটিকের সবগুলো যদি কারো শরীরে অকেজো বা ব্যর্থ হয়ে যায়, তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য। কারো শরীরে এই অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো বা ব্যর্থ হওয়াকেই বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
এদিকে কোন ব্যক্তি যদি অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে করতে প্রায় সবগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যান। মানে তার শরীরের রোগের জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করার মতো শক্তি অর্জন করে নিজস্ব কোষের মিউটেশন ঘটাল। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির শরীরের জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী হয়ে উঠলো। অন্যদিকে আরেকজন ব্যক্তি কখনই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করেননি। ফলে তিনি ভাবছেন কোন চিন্তা নেই কিন্তু কোন কারণে রেজিস্ট্যান্ট ব্যক্তির শরীরের জীবাণু আরেকজন নন-রেজিস্ট্যান্ট ব্যক্তির শরীরে এসে গেলে তখন তিনিও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাবেন। আবার তার সংস্পর্শে আরেকজন! এভাবে সবাই একদিন সকল অ্যান্টিবায়োটিকে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে মৃত্যুর মিছিলে অংশ নেবে।
আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে বলেন , জীবাণু যেভাবে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে তাতে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের ঘাটতি এক সময় আরও বড় স্বাস্থ্য বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। সেসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লভ্য অ্যান্টিবায়োটিকের (অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স) আওতার বাইরে চলে যাচ্ছি এবং যার ফলে শিগগিরই আরেকটি বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে, যেটি হবে বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারীর চেয়েও মারাত্মক।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের পর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স-এর কারণে আর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেরই কার্যকারিতা থাকবে না। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে নিউমোনিয়া, যক্ষা, টাইফয়েড জীবাণুবাহিত রোগগুলোর চিকিৎসা প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সারছে না। তার জন্য নতুন সংবেদনশীল ও উচ্চমূল্যের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োজন হচ্ছে। একই অ্যান্টিবায়োটিক বারবার ব্যবহার করায় ভাইরাস ও ফাঙ্গাসজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে একদিকে অ্যান্টিবায়োটি আর কাজ করছে না আবার অন্যদিকে অন্যান্য রোগ-জীবাণু মানুষের শরীরে সহজে ছড়িয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: কিডনি রোগ আছে কি-না বোঝার উপায়
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যাওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সুপারবাগ। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মাত্রারিক্তি ও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে দিন দিন ওষুধের প্রতিরোধী ক্ষমতা হারাচ্ছে। এ সমাস্যা মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, যথেচ্ছ ব্যবহারে ওষুধ হিসাবে কার্যকারিতা হারিয়ে যাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো শারফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে করোনা ভাইরাসের চেয়ে বেশি সংকটে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২০৫০ সালে দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ মারা যেতে পারে। এর কারণ মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার। সকলের স্বার্থে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধ করতে হবে। যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
কোন ফার্মাসি যাতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করতে না পারে, সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।