যে কারণে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশিদিন বাঁচে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ফাইল ফটো

পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি দিন বাঁচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর ২০১৬ সালের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর। কিন্তু নারী ও পুরুষের আয়ুষ্কাল আলাদাভাবে তুলে আনার পর দেখা যায়- নারীদের গড় আয়ু ৭৪ বছর দুই মাস, অন্যদিকে পুরুষের গড় আয়ু ৬৯ বছর আট মাস। ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩ হাজার ৩৬৪ জন ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, যাদের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা মাত্র নয় হাজার ১৬২ জন। অন্যদিকে নারীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ২০২ জন। তাহলে নারীদের মধ্যে এমন কি আছে, যে কারণে তারা পুরুষের চেয়ে গড়ে বেশি সময় বাঁচেন? এর কয়েকটি কারণ শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানী—

ভ্রূণ: পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি দিন বাঁচেন ভ্রূণের কারণে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ডেভিড জেমস জানান, নারী ভ্রূণের চেয়ে পুরুষ ভ্রূণ বেশি হারে মারা যায়।

XX হলো নারী ক্রোমোজোম এবং XY হলো পুরুষ ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমগুলো আমাদের জিন ধারণ করে থাকে। এক্স ক্রোমোজোমগুলোতে প্রচুর জিন রয়েছে, যা আপনাকে জীবিত থাকতে সহায়তা করে। যদি আপনার এক্স ক্রোমোজোমে জেনেটিক ত্রুটি থাকে, তা হলে একজন নারীর বিকল্প হিসেবে আরেকটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু পুরুষের এক্স ক্রোমোজোম একটি থাকায় তাদের ব্যাকআপের কোনো সুযোগ নেই।

গবেষকরা জানান, ভিন্নতা শুধু পাখির ক্ষেত্রে। পাখির পুরুষের এক্স ক্রোমোজোমের দুটি কপি থাকে। এ কারণে তারা মেয়ে পাখির চেয়ে বেশি সময় বাঁচে।

আরও পড়ুন: গোপন ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি, ইন্টার্ণ চিকিৎসক গ্রেফতার

হরমোন: বয়ঃসন্ধিকালের সময় শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণে ছেলে ও মেয়েরা পুরুষ ও নারীতে পরিণত হয়। টেস্টোস্টেরন এমন একটি হরমোন যেটা মূলত পুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে। যেমন- দীর্ঘকায় দেহ, শক্তিশালী পেশি, ভারী কণ্ঠ এবং লোমশ শরীর ইত্যাদি। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের শেষ সময়টার দিকে ছেলেদের শরীরে এই টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ হয়। এ সময় তাদের মৃত্যুর হার তুঙ্গে থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষের এই হরমোন বেশি থাকার কারণে তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে উৎসাহী হয়, যেমন লড়াই করা, খুব দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল বা গাড়ি ড্রাইভিং এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও পুরুষের বেশি থাকে। এ হরমোনের কারণেই যে কোনো দুর্ঘটনায় পুরুষের মৃত্যুর মুখে পড়ার হার বেশি।

অভ্যাস এবং আচরণ: যেসব এলাকা সংঘাতপূর্ণ, সেসব এলাকায় থাকা পুরুষের আয়ুষ্কালও কমতে থাকে। এ ছাড়া যেসব এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা অপর্যাপ্ত, সেখানে অনেক নারী শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এ ছাড়া ধূমপান, মদপান ও অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ওপরও নির্ভর করে কে কত বছর বাঁচবে। যেমন রাশিয়ান পুরুষ, রাশিয়ার নারীদের চেয়ে ১৩ বছর আগে মারা যায়, কারণ রাশিয়ার পুরুষরা প্রচুর মদ পান করে।

আরও পড়ুন: সকালে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, রাতে মিলল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ

পুরুষাঙ্গ: কোরিয়ান বিজ্ঞানী হান-নাম পার্ক ১৯ শতকের চৌসুন রাজবংশের আমলের কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে তিনি ৮১ জন নপুংশক ব্যক্তির ওপর বিস্তারিত গবেষণা করেন। জানতে পারেন যে, তাদের প্রত্যেকের যৌনাঙ্গ বয়োসন্ধির আগেই অপসারণ করা হয়েছিল। ওই সব নপুংশক ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। যেখানে ওই দেশের অন্য পুরুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫০ বছর। এ থেকে ধারণা করা হয়, পুরুষাঙ্গবিহীন পুরুষ সেটি মানুষ হোক বা কোনো পশুপাখি, তারা বেশি সময় বাঁচে।

জিন: মানুষের মৃত্যুহারের তালিকায় বর্তমানে ৪০টি দেশের তথ্য রয়েছে, যার মধ্যে সুইডেন ও ফ্রান্সের ১ হাজার ৭৫১ এবং ১ হাজার ৮১৬ সালের পুরনো তথ্য পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু জাপান ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর তথ্য ২০ শতকের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া যায়। ওই তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতি বছর সব দেশেই নারীর গড় আয়ু পুরুষের গড় আয়ুকে ছাড়িয়ে গেছে। জেনেটিক গঠনের কারণেই পুরুষ এই অগ্নিরেখায় আছে বলে মনে করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence