পল্লী চিকিৎসক বাবার কথা রেখেছেন ডা: মঈন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২০, ০৬:৩৬ AM , আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০, ০৬:৩৬ AM
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মঈন উদ্দিনের মৃত্যুর খবরে কেবল তার জন্মস্থান ছাতক নয়, সিলেটের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
মঈন ছিলেন এক মানবদরদি চিকিৎসক। সর্বমহলে তিনি ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। মৃত্যুর আগে ছেলেকে বলেছিলেন এলাকার অসহায় রোগীদের যেন নিয়মিত সেবা দেন । পল্লী চিকিৎসক পিতার কথা রেখেছেন ডা: মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতকের নাদামপুরে ছুটে আসতেন তিনি। বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। এলাকার মুরুব্বি সোহেল আহমদ বলেন, ডা: মঈনুদ্দিন শুধু গরিবের ডাক্তার ছিলেন না। এলাকার কোনো রোগী তার সিলেট চেম্বারে গেলেও তিনি তাদের ফ্রি দেখতেন।
জানা যায়, ডা: মো: মঈন উদ্দিন ১৯৭৩ সালের ২ মে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি ধারণ নতুন বাজার উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি এবং ১৯৯০ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর তিনি এফসিপিএস ও এমডি কোর্স সম্পন্ন করেন।
২২তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ স্বাস্থ্য ক্যাডারে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের ২০ মে তিনি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
ডা: মঈনুদ্দিনের স্ত্রী ডা: রিফাত জাহান সিলেটের বেসরকারি পার্ক ভিউ মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (চলতি দায়িত্ব)। তার বড় ছেলে জিহাদের বয়স ১২ বছর। আর ছোট ছেলে জায়ানের বয়স ৭ বছর। তারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম ডা: মঈন উদ্দিনের বড় ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিক উদ্দিন বছর খানেক পূর্বে সেখানে মারা গেছেন। মেজোভাই সিরাজ উদ্দিনও মারা যান কয়েক বছর পূর্বে। তার তিন বোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
ডা. মঈন উদ্দিন সিলেটে করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা ছিলেন। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্যোগে গঠিত সিলেট করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি এ হাসপাতালের ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটিসহ আরো কয়েকটি কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।