আরটি-পিসিআর মেশিন হলে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষা সম্ভব
- আবদুর রহমান, নোয়াখালী
- প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১১:২৭ PM , আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১১:২৭ PM
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমনের ফলে সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর নোয়াখালী লাখো লাখো মানুষও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কারণ এই অঞ্চলগুলোতে প্রবাসী রয়েছে বেশি। তাই সংক্রামনেরও ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও এই বৃহত্তর জেলাটির কোথাও সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে নেই করোনা পরীক্ষার সুযোগ। এমন পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর একমাত্র মেডিকেল কলেজ আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের দাবী জানান ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, এই মেডিকেল কলেজটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব ও অবকাঠামোগত সুবিধা, যা দেশের অনেক মেডিকেল কলেজেই নেই। করোনা ভইরাস টেস্ট করার জন্য ল্যাবে যেই যেই জিনিস থাকার প্রয়োজন তার বেশিরভাগই আছে এখানে। এছাড়াও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে রয়েছেন ৩ জন সহকারী অধ্যাপক, ২ জন প্রভাষক এবং ভাইরোলজিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২ জন বিএসসি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। তাছাড়া অন্যান্য বিভাগে রয়েছে আরো ৪ ল্যাব টেকনোলজিস্ট। জেলা উপজেলা পর্যায়েও টেকনোলজিস্টদের পিসিআর প্রশিক্ষণ রয়েছে তাঁদেরকেও এখানে নিয়ে আসা যাবে পূর্ণাঙ্গ ল্যাব স্থাপিত হলে। এখন শুধুমাত্র আরটি-পিসিআর মেশিন ও কীটসহ কিছু ল্যাব সামগ্রী পেলেই করোনা পরীক্ষা করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. ফারজাহানা আক্তার জানান, এখানে অত্যাধুনিক অনেক ইক্যুইপমেন্ট রয়েছে বর্তমানে আরটি-পিসিআর মেশিন ও কীটসহ কিছু ল্যাব সামগ্রী স্থাপন করা গেলে দ্রুত করোনা রোগী সনাক্ত করা সম্ভব হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মাঝখানে বিস্তীর্ণ এলাকায় এ ধরণের ল্যাব নেই। এই কলেজে অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে, তাই দ্রুত ল্যাব স্থাপন সম্ভব।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নোয়াখালী’র সভাপতি জেলা ডা. ফজলে এলাহী খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ ফেনী এবং লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যবর্তী। এছাড়াও কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চল এবং চাঁদপুরের সাথে যোগাযোগ রয়েছে এই জেলার। প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এই অঞ্চলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশী। ইতেমধ্যে দেশের ১৭টি স্থানে করোনা সনাক্তকরণের জন্য ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। এই মেডিকেল কলেজে দ্রুত আরটি-পিসিআর মেশিন ও কীটসহ প্রয়োজনী ল্যাব সামগ্রী সরবরাহ করলে আমরাও করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করতে পারবো মূহুর্তের মধ্যে। একই সাথে তিনি পরিক্ষা উপকরণ দিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি প্রতি ও আবেদন জানান।
কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মাহফুজুর রহমান বাবুল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবটি আধুনিক এবং পরিপূর্ণ জনবল রয়েছে। বর্তমান সময়ে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় করোনা সনাক্ত করণে পরীক্ষার জন্য কিছু মেশিনপত্র এবং কীটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাহলেই ল্যাবটি পূর্ণাঙ্গতা পাবে এবং এই অঞ্চলের রোগীদের সেবা প্রদান করা হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ল্যাবে করোনা সনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু করেছে এখানেও এটি চালুর দাবি জানান তিনি।
এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে আজ মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস ও সিভিল সার্জন মুমিনুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বৃহত্তর নোয়াখালীতে একটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে (আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)। যাতে অত্যাধুনিক ল্যাব ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডাক্তারগণ রয়েছেন। প্রবাসী অধ্যুষিত এই জেলাটির মানুষের জন্য এইখানে করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা খুবই প্রয়োজন’।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালীর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ সকলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে বিভিন্ন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলনের আহবায়ক ও নোয়াখালী মেইল এর সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক মো. ইমাম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, নোয়াখালীতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই অনেক প্রবাসী এসে জড়ো হচ্ছেন নিজ জন্মভূমিতে। সরকারি হিসেবে জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসে প্রায় ১৮ হাজার এবং শুধু মার্চ মাসেই প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি প্রবাসী নোয়াখালীতে প্রবেশ করে। এদের বেশিরভাগই ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। এমন অবস্থায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ। সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিলেও অনেকে জনসম্মুখে এসে যত্রতত্র বিচরণ করেছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে আতংক ততই বাড়ছে। আর এ মরনঘাতি ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ নেই বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার কোথাও। এমন অবস্থায় জেলার বেগমগঞ্জে অবস্থিত আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে দ্রুত করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করার দাবী জানান তিনি।
এখানে ল্যাব স্থাপন হলে নোয়াখালী ছাড়াও লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও কুমিল্লাসহ অন্তত আরো ৫টি জেলার মানুষ ভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারবে। দ্রুত ল্যাব স্থাপনে প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র এবং কীটসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন এই জেলার মানুষ।