নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে জরুরি সংস্কারের আহ্বান

নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংলাপ
নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংলাপ  © জনসংযোগ

বিশেষজ্ঞরা নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে জরুরি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন অংশীদার এবং বিভিন্ন দেশের গবেষকরা নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার জন্য ‘নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি সংলাপে মিলিত হন। আর্ক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের যৌথ আয়োজনে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্য বৈষম্য দূর করতে প্রামাণিক তথ্যভিত্তিক নীতি সংস্কার ও কার্যকর কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শহরাঞ্চলে বসবাসকারী ৪.২ বিলিয়ন মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপর্যাপ্ত আবাসন, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খারাপ বায়ুর গুণমানের সম্মুখীন হয়, যা গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ সীমিত।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশল এবং নগর স্বাস্থ্য নীতি থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন সীমিত হওয়ায় শহুরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় প্রয়োজন। আসুন আমরা একসাথে কাজ করে একটি স্বাস্থ্যবান সমাজ গড়ে তুলি।

আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রুমানা হক নগর স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, সমতাভিত্তিক ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এবং স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় কমানোর জন্য নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে শক্তিশালী করা অপরিহার্য।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও ভাল সমন্বয়, নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ভূমিকার স্পষ্ট বিভাজন এবং শহুরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত জাতীয় প্রোটোকল সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এছাড়াও, তারা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে ডেটা সংযোগ স্থাপন এবং টারশিয়ারি হাসপাতালগুলির চাপ কমাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার আহ্বান জানান।

কমিউনিটি-লিড রেসপনসিভ এন্ড ইফেকটিভ আরবান হেলথ সিস্টেম (সিএইচওআরইউএস)-এর সহ-পরিচালক অধ্যাপক হেলেন এলসি বলেন, নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাতে বেসরকারি লাভজনক, এনজিও এবং অনানুষ্ঠানিক প্রদানকারীরা আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে সরকারি ও বেসরকারি প্রদানকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন লাইন ডিরেক্টর ও পরিচালক, ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)-এর প্রতিনিধি এবং নেপাল, বাংলাদেশ, ঘানা, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্যের গবেষকরা অংশগ্রহণ করেন।

এই অনুষ্ঠানটি সিএইচওআরইউএস’র অংশ ছিল, যা বাংলাদেশ, ঘানা, নাইজেরিয়া ও নেপালে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিএইচওআরইউএস-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে শহরের দরিদ্র বাসিন্দারা প্রায়শই সরকারি খাতের প্রস্তুতির অভাব, অপর্যাপ্ত সম্পদ এবং অসুবিধাজনক সেবার কারণে বেসরকারি ও অনানুষ্ঠানিক প্রদানকারীদের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পছন্দ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ