এইচএমপিভি কি প্রাণঘাতী, কতটা আতঙ্কের এই ভাইরাস
এইচএমপিভি (হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস) সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাস মূলত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
এই ভাইরাসের সংক্রমণে হালকা সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং গুরুতর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া বা ব্রংকিওলাইটিস দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, এইচএমপিভি সংক্রমণের কারণে প্রতি বছর লক্ষাধিক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তীব্র শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেনের অভাবে এটি বয়স্ক ও অন্যান্য দুর্বল মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এইচএমপিভি ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত শিশুরা
চীন ও ভারত উভয় দেশেই এইচএমপিভি সংক্রমণ মোকাবিলার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও সাফল্যের মিশ্র চিত্র দেখা যায়। চায়না ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে এইচএমপিভি সংক্রমণের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলে শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ লক্ষ্য করা গেছে।
চীনের বড় শহরগুলোর হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকায় সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে গ্রামীণ এলাকায় সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অভাবে এইচএমপিভি সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
এদিকে ভারতে এইচএমপিভি সংক্রমণের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং স্বাস্থ্যসেবার অসম প্রাপ্যতার কারণে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি বেঙ্গালুরু ও গুজরাটে তিন শিশুর মধ্যে ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে, যাদের বয়স ২ থেকে ৮ মাস।
চীনে মূলত শিশুদের মধ্যে এইচএমপিভি সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে হাসপাতালগুলোর শিশু বিভাগে রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভারতে এই সংক্রমণের হার আপাতত কম, তবে উচ্চ জনঘনত্ব এবং শীতল আবহাওয়ার কারণে এই ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এইচএমপিভির সংক্রমণ রোধে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আরও গবেষণা এবং উন্নততর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদন অনুসারে, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়াই উত্তম। যেকোনো ধরনের শ্বাসকষ্ট বা উচ্চ ঝুঁকির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং জনাকীর্ণ এলাকা এড়ানোর মতো সাধারণ সতর্কতাই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
এইচএমপিভি কি প্রাণঘাতী?
চিকিৎসা সাময়িকী মেডিকেল জার্নাল বলছে, অধিকাংশ মানুষের জন্য এইচএমপিভি প্রাণঘাতী নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত, যাদের আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, হৃদরোগ বা অন্যান্য গুরুতর শারীরিক জটিলতা রয়েছে, তাদের জন্য এই ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে। শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে এটি গুরুতর নিউমোনিয়া বা ব্রংকিওলাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
এইচএমপিভি কতটা আতঙ্কের?
এইচএমপিভি বিশ্বজুড়ে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলেও এটি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ভাইরাসটি নতুন নয় এবং বেশিরভাগ সংক্রমণ হালকা প্রকৃতির। তবে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য যথাযথ চিকিৎসার অভাবে এটি গুরুতর রূপ নিতে পারে। এর বেশ কিছু কারণ আছে।
টিকা ও নির্দিষ্ট ওষুধের অভাব: এইচএমপিভি প্রতিরোধে এখনও কোনও নির্দিষ্ট টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই।
দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা: এটি শ্বাসযন্ত্রের ক্ষুদ্র ফোঁটার মাধ্যমে সহজেই ছড়ায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুত সংক্রমণ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সুবিধা সীমিত।
এইচএমপিভি প্রতিরোধের উপায়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে সচেতন থাকা জরুরি। মাস্ক ব্যবহার, সঠিক স্যানিটেশন মেনে চলা এবং শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়াসহ কতগুলো উপায় সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
*হাত ধোয়া এবং স্যানিটেশনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
*জনাকীর্ণ স্থান এড়ানো।
*শ্বাসকষ্ট বা উচ্চ ঝুঁকির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
*এইচএমপিভির নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা টিকা নেই। তাই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা-যেমন অক্সিজেন থেরাপি ও হাইড্রেশন করা হয়।