কিশোরীদের এইচপিভি টিকা কী, কেন এই টিকা দেওয়া জরুরি?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০২ PM , আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০২ PM
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে ছাত্রী ও কিশোরীদের এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আজ বৃহষ্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে দেশের সাত বিভাগে একযোগে শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এ সময় ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
এ কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় টিকাদান চলবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইপিআই অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত বছরের মতো এ বছরও স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
নারীদের একটি অন্যতম সমস্যা জরায়ুমুখ ক্যানসার। প্রতি বছর বিশ্বে বহু নারী এই ক্যানসারে মারা যান। জরায়ুমুখ ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। এর প্রতিষেধক হিসেবে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশু এবং কিশোরীদের টিকা দেওয়া হয়, যা এইচপিভি টিকা নামে পরিচিতি।
এইচপিভি টিকা নেওয়া কেন জরুরি
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আট হাজারেরও বেশি নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার নারীর মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে জরায়মুখ ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। নারীরা আক্রান্ত হলে তা শনাক্ত বা উপসর্গগুলো দেখা দিতেই চলে যায় এক যুগের বেশি। তাই এই ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম উপায় আগাম প্রতিরোধ।
এইচপিভি টিকা জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর টিকাগুলোর মধ্যে একটি। এইচপিভি দ্বারা সৃষ্ট ৯০ শতাংশের বেশি ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে এই টিকা।
এইচপিভি ত্বক থেকে ত্বক বা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর সংক্রমণ এতটাই সাধারণ যে, প্রায় সব নারীরই তাদের জীবনের কোনো না সময়ে অন্তত এক ধরনের এইচপিভি হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সংক্রমণ দুই বছরের মধ্যে নিজ থেকে চলে যায়। কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়। যা পরবর্তীতে জরায়ুমুখ ক্যানসারের সৃষ্টি করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএআরসির সবশেষ ২০২০ সালের গ্লোবোক্যান প্রতিবেদন অনুসারে, জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে বছরে নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ২৬৮ জন ও মারা যান ৪ হাজার ৯৭১ জন।
চিকিৎসকদের মতে, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন গর্ভধারণ, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, ঘন সাদা স্রাব, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব।
কিশোরীদের টিকা দিলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ হতে পারে। তবে সম্পূর্ণ ঝুঁকি এড়াতে ওই কিশোরীদের ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই ভায়া পরীক্ষা করা উচিত। ভায়া পরীক্ষার মাধ্যমে একজন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা ১০ বছর আগে শনাক্ত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসায় জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।