প্রশাসনে ভাগ–বাঁটোয়ারায় জড়িত উপদেষ্টারা, ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান এনসিপির

উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির নেতারা
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির নেতারা  © সংগৃহীত

জনপ্রশাসনে বদলি–পদায়নে ‘ভাগ–বাঁটোয়ারায়’ উপদেষ্টারা জড়িত এমন অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি জানায় দলটি।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসনে যেভাবে বদলি–পদায়ন হচ্ছে, সেটা নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। দেখা যাচ্ছে, বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে প্রশাসনের ভাগ–বাঁটোয়ারা করছে। তারা এসপি–ডিসির তালিকা সরকারকে দিচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও কিছু উপদেষ্টা এ কাজে সহায়তা করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।’

এভাবে চলতে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে সতর্ক করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকার যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে এবং যেসব উপদেষ্টার বিরুদ্ধে অদক্ষতা, দুর্নীতি বা রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যেন প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেন।’

আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে উপদেষ্টা পরিষদে শুদ্ধি অভিযানের আহ্বান রাশেদ খাঁনের

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানায়। একই ধারাবাহিকতায় আজ এনসিপির নেতারা সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে ছিলেন দলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।

বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি জুলাই সনদের আওতাধীন। কমিশনে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণভোটের পরেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। ফলে এখন এমন দাবি করা হলে তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো দুরভিসন্ধি আছে।’

বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ পুরোপুরি পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলেও মনে করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা জরুরি। কিন্তু পুরো পরিষদ পরিবর্তনের সুযোগ নেই।’

ছাত্র উপদেষ্টাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টারা কোনো দলের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, গণ–অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে রয়েছেন। যদি তাঁদের দলীয় সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তবে অন্যান্য উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রেও একইভাবে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।’

নাহিদ ইসলাম জানান, বৈঠকে জুলাই গণহত্যার বিচার, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, এবং সাংবিধানিক আদেশ জারির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা বলেছি, জুলাই সনদের কাগুজে মূল্য নয়, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসই জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি, তাই সাংবিধানিক আদেশ তাঁকেই দিতে হবে, প্রেসিডেন্টকে নয়।’

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এনসিপি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে আচরণ করছে, তা স্বচ্ছ বা নিরপেক্ষ নয়। কিছু দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, অন্য দলের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন পুনর্গঠন জরুরি।’

বৈঠকে আরও আলোচনা হয় বিসিএস নন–ক্যাডার বিধিমালা, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বিষয়ে। এনসিপির আহ্বায়ক জানান, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ