১৩৯৯ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ভাতা নেন না, তাদের খুঁজছে সরকার

  © সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, গেজেট অনুযায়ী বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ৬ হাজার ৭৫৭ জন। এর মধ্যে ভাতা গ্রহণ করছেন ৫ হাজার ৩৫৮ জনের পরিবার। অবশিষ্ট ১ হাজার ৩৯৯ জনের পরিবার ভাতা নেন না। তারা এ পর্যন্ত আবেদনও করেননি। এই শহীদ পরিবারগুলো কোথায়, কেন তারা ভাতা নিচ্ছে না রাষ্ট্র জানে না। রাষ্ট্রকে তাদের কাছে যাওয়া উচিত। তাদের খুঁজে বের করা উচিত। কারা এই শহীদ পরিবার।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৬ মার্চ) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বাসসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই গ্রামের কৃষক, শ্রমিক জনগণ। তারা জানেন না কীভাবে সরকারের কাছে আবেদন করতে হয়। শহীদ পরিবারগুলো খুঁজে বের করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারগুলোকে খুঁজে বের করে রাষ্ট্রের প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা।

এ পর্যন্ত ৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৪০ হজার ডাটা এন্ট্রি হয়ে গেছে। ৫০ হাজার ডাটা এন্ট্রির কাজ চলমান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এখন সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্বেচ্ছায় নাম প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হবে। ইতোমধ্যে কয়েকজন নাম প্রত্যহারের আবেদন করেছেন। যারা নাম প্রত্যাহার করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

অভিযোগ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য চিঠি ইস্যু করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। শুনানি করে যাদের কাগজপত্র ঠিক আছে, তারা গেজেটভুক্ত থাকবে। আর যারা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবেন না, তাদের গেজেট বাতিল করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের পর দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করছি সময় কিছুটা ক্ষেপণ হলেও প্রকৃত রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রস্তুতে সফলতা আসবে।

সরকার রণাঙ্গনের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে করেছে জানিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, যেসব কৃষক-শ্রমিক, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, নৌ কমান্ডো, আনসার, ইপিআর সদস্য যুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের মর্যাদা কখনো সীমান্ত পাড়ি দেওয়া, কিংবা বিদেশে বসে আরাম-আয়েশে জনমত সৃষ্টির প্রচারণা চালানো, ফুটবল খেলোয়াড়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গান গাওয়া মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা এক হতে পারে না। তাই মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। এ ব্যাপারে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা প্রজ্ঞাপন জারি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, যারা রণাঙ্গনে ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করেছেন, তারা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। অপরদিকে যারা বিদেশে জনমত তৈরির প্রচার চালিয়েছেন, স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিমের খেলোয়াড়, স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সহকারীসহ যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রয়েছেন, তাদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধের সেদিনের চেতনার সঙ্গে এখনকার চেতনা মেলানো যাবে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, এখন সবাই সুবিধাভোগী এবং চেতনাকে নানাভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ইমেজ সংকটে পড়েছে।

উপদেষ্টা জানান, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কোনোরূপ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া নির্মোহভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও সম্মানিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তা বাস্তবায়ন করা গেলে অর্ধশতাব্দীর বঞ্চনার ইতিহাসের পরিসমাপ্তি হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence