যে ১১টি কারণে ৪১তম বিসিএসে আপনিই হবেন ক্যাডার
- সঞ্জয় সরকার
- প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০৩:৪১ PM , আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০৩:৪৫ PM
৪১তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৩ জন প্রার্থী। কয়জনই বা আর ক্যাডার হতে পারবেন এর মাঝে! যদি আপনি বিসিএস প্রার্থী হয়ে থাকেন তাহলে এসব নিয়ে নিশ্চয়ই আপনি বেশ অনেকটা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। পড়ুন অব্যর্থ এক বিসিএস মোটিভেশন। নিচের কারণগুলো পড়লে আপনি খুব সহজেই বুঝে যাবেন বিসিএস পরীক্ষা উতরে গিয়ে কীভাবে আপনিই হয়ে উঠবেন একজন ক্যাডার।
প্রথমত— যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে ৫০ হাজার আছে যারা আবেদন করতে হয় বলে করেছে। এতো বড় একটা পরীক্ষা, আবেদন না করলে কেমন দেখায়! এই অংশ এমনিতেই বাদ।
দ্বিতীয় — আবেদনকারীদের মধ্যে ৫০ হাজার আছে যাদের ফর্ম কিনে দেওয়া হয়েছে। বাবা-মা, চাচা-মামা-খালা-ফুফু কিংবা কোন স্বজন নিজের গাটের পয়সা খরচ করে ৭০০ টাকা দিয়ে বিসিএস ফর্ম কিনে দিয়েছেন। ফ্যামিলির ছেলেটা বা মেয়েটা বিসিএস না দিতে গেলে কেমন দেখায়, সেই ভেবে। এই প্রার্থীদেরও বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করার সুযোগ নেই।
তৃতীয়— প্রার্থীদের মদ্যে ৫০ হাজার আছে যাদের মূল টার্গেট ৪২-৪৩ কিংবা ৪৪তম বিসিএস। ‘জাস্ট এক্সপেরিয়েন্স’র জন্য তারা এই বিসিএস দিবে। পিএসসিও এদেরকে ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ তালিকায় রাখবে! সুতরাং, অন্য রাস্তা মাপুন। বাদ!
চতুর্থ— ৫০ হাজার আছে যারা ভুলেই যাবে বিসিএস পরীক্ষার কথা। প্রিলির দিন তাদেরকে ফেসবুকে অনলাইন দেখে হয়ত কোন বন্ধু জানাবে, ‘কীরে আজকে না তোর পরীক্ষা!’ হন্তদন্ত হয়ে বের হতে গিয়ে দেখবে তখন সময় বারোটা চার!
পঞ্চম— লোকমুখে প্রচলিত আছে, বিসিএস প্রিলির দিন অসংখ্য তরুণ-তরুণী মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপন করে থাকেন দুই ঘন্টার জন্য। প্রিলির রেজাল্ট প্রকাশের পর তারা সবাইকে জানান, ফলাফল অকৃতকার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ৫০ হাজার প্রার্থী অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে পারেন না।
ষষ্ঠ— ৫০ হাজার প্রার্থী আছেন যারা মহাসমারোহে নীলক্ষেত (কিংবা স্থানীয় বইয়ের দোকান) থেকে বস্তা ভরে এমপিথ্রি, সাইফুর’স, অফিসার’স চয়েজ, আজকের বিশ্ব এবং বিবিধ বই কিনে নিয়ে আসেন। এরপর তার চাইতেও মহাসমারোহে রাত জেগে পড়ার জন্য চা, কফি, স্ন্যাকস ইত্যাদি কিনে নিয়ে আসেন। সাথে নতুন কফির মগ, পানির ফ্লাস্ক এবং আরও কত কী! কেউ কেউ জিআরই, জিম্যাট, আইএলটিএস এসবের বইও কিনে আনেন। এরপর প্রতিদিনই ‘কী পড়ব! কী পড়ব!’ এবং ‘কালকে সকাল থেকেই কোপায়া পড়ব’ এসব ভেবে ভেবে হুট করে দেখেন প্রিলির দিন চলে এসেছে। এদের দিয়েও বিসিএস হবে না!
সপ্তম— আরও ৫০ হাজার প্রার্থী আছেন যারা নির্বাচন, তারপর ভালোবাসা দিবস, তারপর পহেলা বৈশাখ, সাথে গেম অফ থ্রোনসের নতুন সিজন এবং হুট করে বাজারে আসা নতুন কোন ট্রেন্ড নিয়ে পড়ে থাকবে। বিসিএস তাদেরকে দিয়েও হবে না!
অষ্টম— শেষে আরও ৫০ হাজার প্রার্থী আছে যারা প্রিলির তারিখ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করে করে দিন কাটায়। তারিখ দিলেই যেন পড়ালেখার বন্যা বইয়ে দিবে। আর ভাবে, প্রিলি তো সহজ। দেশ, রাজধানী আর মুদ্রার নাম। এইগুলা ডেট দেওয়ার পরে পড়লেই চলবে। নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে ‘কাম অন গাইজ! বিসিএসকে এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কী আছে?’ বিসিএস-ও এদের সিরিয়াসলি নেয় না শেষ পর্যন্ত।এই পর্যায়ে এসে ৪ লাখ প্রতিযোগী ছিটকে পড়েছেন! রইলো বাকি ১২ হাজার ৫৩২ জন পরীক্ষার্থী, যার মাঝে আমিও একজন। আপনিও হয়ত আরেকজন!
নবম—এদের মধ্যে হাজার পাঁচেক আছে যারা আসলে অনেক ভালো চাকরি করে। তারা ঐ চাকরির চাপে বিসিএসটা পড়বে কখন?
দশম— আরও ৫ হাজার প্রার্থী থাকবেন যারা প্রিলিতে পাশ করবেন, কিন্তু রিটেনের পড়ার চাপ নিতে না পেরে মনোবল হারিয়ে ফেলবেন। এরপর মোটিভেশনাল ভিডিও দেখে মনোবল ফিরিয়ে আনতে গিয়ে আবারও ভেঙে পড়বেন। কেউ কেউ মোটিভেশনাল ভিডিও থেকে চলে যাবেন অন্য ভিডিওতে। সেখান থেকে অন্য কোথাও… সেখান থেকে আরও দূরে… বহুদূরে...
সর্বশেষ— এর মাঝে ৩৮, ৩৯ ও ৪০ বিসিএস এর প্রতিযোগীরাও আছে। তারাও এপ্লাই করেছে। যারা ভালো ক্যাডার পাবে তারাও আসলে বাদ। অনেকেরই পরীক্ষার সকালেও অসুস্থতা ধরা পড়বে, অনেকেরই সকাল বেলার অ্যালার্ম বাজবে না। অনেকেই আগের দিন কোথাও ভেলপুরি বা ঝালমুড়ি খেয়ে বাথরুমের সাথে শান্তিচুক্তি স্থাপন করে সেখানেই বসবাস শুরু করবে।
আর কোনো প্রতিযোগী আছে? হ্যাঁ, আমি আছি! শুধুই আমি। ভাবছি ভাইভা বোর্ডে যখন জিজ্ঞেস করবে ‘তা বলুন মিস্টার সঞ্জয়! আপনি ফরেন নিচ্ছেন নাকি এডমিন?’ কী এক মহাফ্যাসাদেই না পড়ে যাব।
লেখা: সংগৃহিত