মাভাবিপ্রবি ছাত্রীদের হল যেন কারাগার

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল ও লোগো
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল ও লোগো  © টিডিসি ফটো

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলে জুনিয়র ছাত্রীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। হলের সিনিয়র ছাত্রীরা জুনিয়রদের একের পর এক নিয়ম বেঁধে দিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করলেও হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, মাভাবিপ্রবিতে ছাত্রীদের থাকার জন্য দুটি আবাসিক হল রয়েছে। এছাড়া একটি হল নির্মানাধীন রয়েছে। অন্য হল নিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগ না থাকলেও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল নিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। সম্প্রতি হলে জুনিয়র ছাত্রীদের জন্য অবশ্য পালনীয় হিসেবে কিছু নিয়ম লিখিতভাবে টাঙানো হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর ছবি ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

হলে টাঙানো সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ সেশনের আপুদের জন্য রান্না ঘরের ডান পাশের চুলা সবসময় বরাদ্দ থাকবে। অন্য কেউ ঐ চুলায় রান্না করবেন না। সন্ধ্যার পর দয়া করে কোনো জুনিয়র ভারি রান্না করতে আসবেন না। ইফতারের আগে ভারি রান্না কেউ করবেন না। সিনিয়র দেখলে জুনিয়ররা নিজ দায়িত্বে চুলা ছেড়ে দিবেন।’

ওই ছাত্রী হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ সেশনের পরের সকলকেই জুনিয়র হিসেবে এই নিয়মগুলো পালন করতে হয়। এছাড়া আরও বেশকিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। একজন ৪র্থ বর্ষ বা মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নতুন হলে উঠলে তাকেও এসব কঠোর নিয়ম মেনে হলে থাকতে হয়।

আরও পড়ুন: চবিতে বেড়েছে স্থানীয়দের ক্ষোভ, নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের একাধিক ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, ‘রুমে হাসাহাসি করা যায় না, মনে মনে পড়তে হয়, রুমের মধ্যে কোনো ধরনের শব্দ করা যায় না। রাত ১১-১২ টার মধ্যে ব্যক্তিগত বাতি নেভাতে হয়। তবে মোস্ট সিনিয়ররা হাসাহাসি করতে পারে, শব্দ করে পড়ে এবং নিজেদের প্রয়োজনে গভীর রাত পর্যন্তও বাতি জ্বালিয়ে রাখে।’

তারা আরও জানায় ‘৩য়, ৪র্থ বা মাস্টার্সের ছাত্রী যারা নতুন হলে ওঠে তাদেরও প্রথম বর্ষের জুনিয়রদের মতো র‍্যাগিং দেয়া হয় ও ম্যানার শিখতে। আমরা মোটামুটি সিনিয়র হয়ে হলে উঠেও কেনো আবার নতুন করে এমন হয়রানির স্বীকার হবো। আমরা তো প্রথম বর্ষেই সিনিয়রদের সম্মান করা কিংবা সকল ধরনের ম্যানার শিখেছি। মোস্ট সিনিয়ররা মাঝে মধ্যেই গেস্ট নিয়ে এসে দিনের পর দিন হলে রাখে অথচ তাদের থেকে যারা জুনিয়র তাদের কোনো গেস্ট হলে রাখতে দেয় না।’

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ‘চুলায় রান্না করা অবস্থায় ভাত আধা সিদ্ধ থাকলেও সিনিয়র আসলে চুলা থেকে পাতিল নামিয়ে রাখতে হয়। বাথরুমের জন্য সিরিয়াল দিতে হয়, সিনিয়র যদি সিরিয়াল দিয়ে থাকেন তাহলে জুনিয়রদের অপেক্ষা করতে হয়। এ সকল বিষয়ে কোনো সমস্যা প্রভোস্টকে জানানো হলে, সকল সিনিয়র মিলে পুরো হলে মিটিং ডেকে ভয় দেখানো হয় এবং প্রয়োজনে ছাত্রীত্ব বাতিল এবং মারার হুমকিও দেয়া হয়। সাহস করে কেউ প্রভোস্টকে সমস্যার কথা জানালেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। যার কারণে অনেকে হলে ওঠার কিছুদিন পরে থাকতে না পেরে হল ছাড়তে বাধ্য হয়।’

আরও পড়ুন: খাদ্য বিজ্ঞানে দেশসেরা চতুর্থ অবস্থানে হাবিপ্রবি

তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের প্রভোস্ট মোসা. নার্গিস আক্তার। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, আমাদের হলে কয়েকটা গণরুম আছে। সেখানে একটা রুমে রান্নার চাপ আছে। এজন্য সিনিয়র-জুনিয়রদের একটু সমস্যা হয়েছিল। সিনিয়ররা শুধু চুলার ওপর এই লেখা টাঙিয়েছিল। আমি পরবর্তীতে সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের আমরা নতুন আরেকটি চুলা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এটি তেমন কোনো বিষয় না।

সিনিয়রদের ম্যানার শেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে অনেক সময় মেয়েদের অনেক পরাসোনাল ইস্যু থাকে। এটি সবার সামনে বলা হলে লজ্জায় পড়তে পারে। সেজন্য হলের সিনিয়ররা একজন একজন করে ডেকে তাদের বিষয়টি বলে। এটি র‌্যাগিং কিংবা ম্যানার শেখানো নয়। যদি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করে থাকে তাহলে সেটি মিথ্যা।


সর্বশেষ সংবাদ