আবরার হত্যার দুই বছর, বিচারের জন্য আর কত অপেক্ষা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০৯:২১ AM , আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৩৩ AM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী নিহত আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার (৬ অক্টোবর)। ২০১৯ সালের এইদিনে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। হত্যার দুই বছরেও বিচারের অপেক্ষা কাটেনি তার পরিবারের। তার পরিবার আর স্বজনরা বিচার পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে আছেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিচার কার্যক্রম থেমে ছিল। এখন পুরোদমেই কার্যক্রম চলছে। মামলাটির বিচারকাজ যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আশা করছেন, সব ঠিকঠাক চললে আগামী মাসের মধ্যেই রায় পাওয়া যেতে পারে।
২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনার পরদিন ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন। এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে শিবির সন্দেহে আবরারকে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন ৩ জন। তাদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
এজাহারে থাকা আসামিরা হলেন, মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।
এজাহার বহির্ভূত ৬ আসামি হলেন, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।
তাছাড়া পলাতক তিন আসামি হলেন, মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুই জন এজাহারভুক্ত আসামি।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে গত ১৪ মার্চ আত্মপক্ষ সমর্থনে ২২ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এ মামলায় মোট ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলার চার্জে কিছু ত্রুটি থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনরায় চার্জগঠনের আবেদন করেন। পরদিন আদালত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় চার্জগঠন করে ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে দুই কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিচারকের অসুস্থতার কারণে শুনানি এক মাস পিছিয়ে যায়। ২০ অক্টোবর থেকে বিচারকাজ শুরুর কথা রয়েছে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে বেড়ে উঠা আবরার জেলার মিশন স্কুল ও জেলা স্কুলে লেখাপড়া শেষ করে ২০১৮ সালে বুয়েটে ভর্তি হন। তার মা রোকেয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। দুই বছর পূর্ণ হলেও ন্যক্কারজনক এই হত্যাকাণ্ডের এখন পর্যন্ত বিচার কাজ শেষ হয়নি। আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তার প্রতিবেশীরা জানান, মেধাবী শির্ক্ষার্থী আবরার ফাহাদ দেশের সম্পদ ছিল। নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হলেও আসামিরা এখনো শাস্তির আওতায় আসেনি। এই হত্যাকাণ্ডের মঙ্গে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
দেশের অন্যতম এই বিদ্যাপিঠে একজন শির্ক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচিত হয়। পরে এ ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীসহ দেশের সাধারণ মানুষ।