বশেমুরবিপ্রবি
প্রভাষকের ‘কল্লা কেটে’ নেয়ার হুমকির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
- ফাতেমা-তুজ- জিনিয়া
- প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৭:৩৭ PM , আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ০২:০৩ PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক টি এন সোনিয়া আজাদের ‘কল্লা কেটে’ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন একই বিভাগের চেয়ারম্যান বিতান খানম। একই সঙ্গে ওই প্রভাষকের দিকে পেপার ওয়েট, সিল প্যাড ও স্ট্যাপ্লার মেশিন ছুড়ে মারেন তিনি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর এক লিখিত আবেদনে এ অভিযোগ করেছেন প্রভাষক সোনিয়া। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহকারী অধ্যাপক বিতান খানম।
গত ৩০ নভেম্বর রেজিস্ট্রার বরাবর এ ‘শারীরিকভাবে নিগৃহীত হবার ঘটনায় প্রতিকার প্রার্থনা’ করে আবেদন পত্র জমা দেন ওই প্রভাষক। পত্রটিতে তিনি জানান, গত ২৯ নভেম্বর তারিখ দুপুর ১টায় লােক প্রশাসন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সভা চলাকালীন বিভাগীয় সভাপতি বিতান খানম বিধি বহির্ভূতভাবে লােক প্রশাসন বিভাগের এক প্রভাষকের অভিজ্ঞতা ও যােগ্যতা অধিক দেখিয়ে প্ল্যানিং কমিটির এজেন্ডায় স্বাক্ষর প্রদান করতে বলেন সোনিয়াকে।
তিনি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আপগ্রেডেশন প্রমােশন নীতিমালার বিরুদ্ধে হওয়ায় আপত্তিসহ স্বাক্ষর প্রদান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিতান খানম তাকে তার টেবিলে থাকা পেপার ওয়েট, সীল প্যাড ও স্ট্যাপ্লার মেশিন ছুড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এছাড়া ইতোপূর্বে বিতান খানম তাকে তার কল্লা কেটে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এমন একটি অডিও রেকর্ড ভাইরালও হয়েছে। তাতে বলতে শোনা যায়- “আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, আর আমি যদি এই পজিশনে না থাকতাম তাহলে আপনার কল্লা কেটে ফেলে দিতাম।”
সোনিয়া আজাদ জানান, এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তারিখেও বিতান খানম তাকে ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন করেছিলেন এবং ওই সময়ে বিষয়টি তিনি শিক্ষক সমিতিকে অবহিত করেছিলেন। শিক্ষক সমিতি তখন বিষয়টি সুরাহাও করে দিয়েছিল। কিন্তু এরপরও বিতান খানম উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন।
বিষয়টি নিয়ে বিতান খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, আমার কাছে এক শিক্ষকের যৌন হয়রানির প্রমাণ রয়েছে। এ কারণে ওই শিক্ষক সোনিয়া ম্যাডামকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করছে। এছাড়া সোনিয়া ম্যাডাম অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন সেটি আমি জানি। তিনি আমাকে আমাদের এক সহকর্মীর একটি অভিজ্ঞতা গণ্য না করার বিষয়েও অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমি তার অনুরোধ রাখিনি। মূলত এসব কারণেই তিনি আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
এ সময় বিতান খানম বিষয়টি নিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের তিন শিক্ষক মো: নাসিরউদ্দিন, মো: হাশেম রেজা এবং আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আয়েশা সিদ্দিকা বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অপর দুই শিক্ষক ‘কল্লা কেটে ফেলা’ সংক্রান্ত হুমকির বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে প্রভাষক মো: নাসিরউদ্দিন জানান, অভিযোগে উল্লেখিত মিটিংয়ে কোনো শারিরীক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সোনিয়া আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নিজের মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমেই নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া তিনি অভিজ্ঞতা গণ্য না করার বিষয়ে কোনো অনুরোধ করেননি। তিনি শুধু বিষয়টিতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করেছেন। আর অভিযুক্ত বিতান খানম তাকে বারবার অশ্লীল গালাগালসহ হুমকি দিয়েছেন এবং মানসিক নির্যাতন করেছেন। মূলত এসব কারণেই তিনি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
তিনি জানান, তিনি কোনো অফিসিয়াল লেটার না পেলেও জানতে পেরেছেন এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে এবং তদন্ত কমিটিতে থাকা এক সদস্যের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে তিনি একটি পদ থেকে পদত্যাগও করেন। এমন বিতর্কিত কেউ কমিটির সদস্য থাকলে তদন্ত প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
গোটা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আব্দুর রউফ বলেন, “অভিযোগ-আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে। তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে বিতর্কিত কেউ থাকলে তদন্ত কমিটিতে পরিবর্তন আনা হবে।”