নোবিপ্রবিতে শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে মশাল মিছিল
- নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২৪ PM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:৪৬ AM
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (সাময়িক বহিষ্কৃত) বাদশা মিয়ার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে মশাল মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও দুই বছরের সাময়িক বহিষ্কার হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত আদেশের প্রতিবাদ জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল শুরু করে বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে আবার শহিদ মিনারে এসে শেষ হয়। সেখানে মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করেন তারা।
মশাল মিছিলে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘জাস্টিস ফর ফয়েজ’; ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’; ‘বহিষ্কার বহিষ্কার-স্থায়ী বহিষ্কার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করেও ক্ষান্ত হননি বাদশা মিয়া। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে ফয়েজের পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রানা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর, আইন বিভাগের সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষক বাদশা মিয়া আমাদের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়েজ ভাইয়ের জীবনের তিনটি বছর নষ্ট করে দিয়েছে। বিনা কারণে তাকে কয়েক মাস অন্ধকারে কারাবরণ করতে হয়েছে। ফয়েজ ভাইয়ের কোন দোষ ছিল না । বাদশা মিয়া এ কাজ করেছেন শুধু উপরের মহলের তাঁবেদারি করার জন্য; যাতে তিনি প্রমোশন পান। আমরা বলতে চাই, তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক। তা না হলে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়নের যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
আইন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জাফর আহমেদ বলেন, বাদশা মিয়া শুধু নোবিপ্রবির নয়, সারা দেশের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। শিক্ষকতার নাম করে তিনি দলান্ধ আচরণ ও একটি নির্দিষ্ট শাসকগোষ্ঠীর চাটুকারিতায় লিপ্ত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তির স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হওয়ার কথা, তাকে মাত্র দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে আপনারা প্রমাণ করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে বাদশা মিয়ার একটি চ্যাট আলাপ রয়েছে। যেখানে দেখা যায়, হানিফ মুরাদ স্যার ফ্যাসিস্ট বাদশা মিয়াকে পুনর্বহাল করতে চাইছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা একটি বিপ্লবী প্রশাসনের ভূমিকা পালন করুন এবং বাদশা মিয়াকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ক্যাম্পাসে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি কমেন্টকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালে পাঁচ দিনে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদকে। পরবর্তীতে মামলা ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু মামলায় জামিন পেয়েও দীর্ঘ চার বছর ক্লাস করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করেন উক্ত শিক্ষার্থী।
গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ফয়েজের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় আইন বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান বাদশা মিয়াকে রিজেন্ট বোর্ডের ৬৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমেদের শিক্ষাজীবন নষ্ট করার অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে ২ বছরের জন্য অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সম্প্রতি হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া শাস্তি স্থগিত করলে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করে এবং স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি তুলেন।