আবারও সমস্যায় কুয়েট, সমাধান কোন পথে?

 খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এর শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, বহিরাগতদের হামলা, ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং উপাচার্যের অপসারণ দাবিকে কেন্দ্র করে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়েছেন কুয়েটের শিক্ষকরা। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণের মাধ্যমে একটি সমস্যার সমাধান হলেও নতুন করে আবার ছাত্র-শিক্ষকদের সম্পর্ক ঘিরে নীরব একটি সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়েছে।

জানা গেছে, প্রথম থেকেই এই আন্দোলনে উপাচার্যের পক্ষ অবলম্বন করেছিল শিক্ষক সমিতি। তাই উপাচার্যের অপসারণের পর শিক্ষক সমিতি এটিকে ‘ন্যায়বিচারের পরাজয়’ বলে মন্তব্য করে। সম্পর্কের এই দূরত্ব ঘোচাতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি তারা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ওয়েমার পদ্ধতি অনুসরণের দাবি তুলেছে কেউ কেউ।

গালিব রাহাত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকই উন্নত মানসিকতার অধিকারী। আমরা মনে করি না যে শিক্ষকরা আন্দোলনের সময়কার অবস্থানের কারণে আমাদের খাতায় প্রভাব ফেলবেন। তবে দুই-একজন থাকতে পারেন, যারা এমনটা করতে পারেন—এমন ধারণা থেকেই আমরা ওয়েমার ভিত্তিক খাতা মূল্যায়নের পদ্ধতির জন্য আবেদন জানাবো।’

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে শিক্ষার্থীরা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমাদের ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কিছু ভুল হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মানুষ তো ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। শিক্ষকরা যেহেতু আমাদের অভিভাবক, আমরা আশা করি তারা আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের ভুল স্বীকার করে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাইব এবং কেউ যদি শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত থাকে, তাকে শাস্তির আওতায় আনতে চাই।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ক্লাস শুরু হলে এই বৈরী সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

ওবায়দুল্লাহ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের আন্দোলন ছিল প্রশাসনের বিরুদ্ধে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘কয়েকজন স্বার্থান্বেষী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের একটি রাজনৈতিক দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতার পেছনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, যার ফলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মুখোমুখি অবস্থা তৈরি হয়েছে।’

উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে নেতৃত্ব দেওয়া মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ঠিক করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের কথা চলছে। আগামী দু-একদিনের ভিতরে আলোচনায় বসা হতে পারে। শিক্ষকরা খাতায় নম্বর কম দিবেন এমনটা হবে না। কেউ কেউ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে দাবি করতে পারে। আমার বিভাগের শিক্ষকরা এমন না। আর আমরা প্রেস বিফ্রিংয়ের মাধ্যমেই শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। তবে ৫ আগস্টের পর থেকেই আমাদের দাবি ছিল খাতায় যাতে নাম না থাকে মূল্যায়ন করার সময়।

শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আখতার বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভিসি বা প্রোভিসি নেই। নতুন প্রশাসন আসার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত ৪ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত কার্যকর রয়েছে।’

শিক্ষক লাঞ্ছনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ এতে জড়িত থাকে, তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এটা শুধু শিক্ষকদেরই নয়, ছাত্রদেরও দাবি।’

এদিকে, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি।

তবে এর আগে ডেইলি ক্যাম্পাসকে এক প্রশ্নের জবাবে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন ‘এটা ছাত্রদের আজীবনের অভিযোগ। যখন তারা শিক্ষক হয়, তখন প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে পারে। তাই আমি এখন কিছু বললেও কাজ হবে না।’

এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা হলে ফিরেছেন, হলগুলো খুলে দেওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!