ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আইইউটিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ  

 ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি)
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি)   © সংগৃহীত

তিন শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করেছেন গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীরা। দায়ীদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। আজ বৃহস্পতিবারও (৯ জানুয়ারি) কোনো ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা

জানা যায়, গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) বার্ষিক বনভোজনে গিয়ে চলন্ত বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন মোজাম্মেল হোসেন ওরফে নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান ওরফে মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম ওরফে সাকিব (২৩)। তাঁরা সবাই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আইইউটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ৬টি ডাবল ডেকার বাসযোগে গত ২৩ নভেম্বর সকালে বার্ষিক বনভোজনে জেলার শ্রীপুরের একটি রিসোর্টে যাচ্ছিলেন। গন্তব্যের দেড় কিলোমিটার আগে তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে একটি আঞ্চলিক সড়কে একটি বাস বিদ্যুতায়িত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন দিনের শোক ঘোষণা করে। পাশাপাশি এক সপ্তাহ ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকার ঘোষণা দেয়। ওই ঘটনার পর ২৮ নভেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও নির্যাতনের কথা এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের খবর পেয়ে গত ২১ ডিসেম্বর ওআইসির একটি প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে এবং ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।

শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বনভোজন আয়োজনে নিরাপত্তার ঘাটতি ও অবহেলার কারণে মেধাবী তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা টানা তৃতীয় সপ্তাহ তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং প্রশাসনের একটি অনুমোদনহীন সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে। দুর্ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং কয়েকজন শিক্ষক অসংবেদনশীলতা ও দায়িত্বহীনতা প্রদর্শন করেছেন। মর্মান্তিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থী প্রাণ হারানোর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের সমস্যাগুলো উন্মোচন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেগুলোর জবাবদিহি ও সংস্কারের দাবি একটি বৃহদাকারের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এ সময় অসদাচরণ ও অবহেলায় জড়িত শিক্ষক–কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিক্ষোভের পর ওআইসি মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ সমাধানের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে দাবি সম্পূর্ণরূপে পূরণ এবং সন্তোষজনক ব্যবস্থা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস–পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!