শাবিপ্রবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ গার্ড দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করানোর অভিযোগ

অভিযুক্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম
অভিযুক্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগে মোটা অংকের টাকা আদায়, চাকরি থেকে হুটহাট বরখাস্ত, জোর করে বাসার কাজ করানো, শিডিউলের বাহিরে ডিউটি দেওয়া, সনাতন ধর্মের চয়ন দাসের হাতে লাল সুতো বাঁধার কারনে ডিউটিতে জয়েন করতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।  

নিরাপত্তা কর্মীদের অভিযোগ বিভিন্ন সময় তাদেরকে হুমকিধামকি ও ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখা হতো। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো নিরাপত্তাকর্মী কথা বললে চাকরি হারাতে হতো। রাতের শিডিউলে কাজ করলেও দিনে আবার জোর করে ডিউটিতে পাঠানো হতো। শিডিউলের বাহিরে ডিউটি করতে অসম্মতি জানালে ঐ দিনের হাজিরা কেটে দেওয়া হতো। সময়মতো ডিউটি করেও অনেক সময় টাকা পরিশোধ করতেন না তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসাবে কাজে যোগদান করার পরে নিরাপত্তা কর্মীদের দাঁড়ি রাখতে নিষেধ করা হলে বয়স্ক কর্মীরা বিব্রতবোধ করে প্রতিবাদও করেন তার বিরুদ্ধে। 

কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ ফোন দিয়ে সাইফুল শাক-সবজি ও ঔষধ নিয়ে আসতে বলতেন। এসব টাকা দিতেন ২/৩ মাস পরে। তার অমিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিভিন্ন সময় উপাচার্য বরাবর একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও ফলপ্রসূ কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তারা।

নিজের কথা মতো না চললে চাকরিও হারাতে হয়েছে অনেককে। শাহানুর নামের এক নিরাপত্তাকর্মী হার্টের চিকিৎসা করাতে গেলে ফিরে এসে দেখেন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

রমজানের শুরুতে সাইফুল ইসলাম নামের এক নিরাপত্তা কর্মীদেরকে ১০ হাজার টাকা দিতে বলেন নাহয় চাকরি থাকবেনা বলেও হুশিয়ারি দেন। এমনকি প্রতি মাসের বেতন থেকে আড়াই হাজার টাকা কেটে রাখা হবেও বলে জানান। এসব নিয়মের উল্টো গেলেই কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও হুশিয়ারী দেন তিনি। কোম্পানির সুনাম নষ্ট হচ্ছে অভিযোগ এনে জুয়েল নামের এক নিরাপত্তা কর্মীকে মে মাসের ১৬ তারিখে চাকরিচ্যুত করেন তিনি ।   

এ ব্যাপারে জুয়েল বলেন, আমি সাত বছর ধরে ক্যাম্পাসের একজন নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা করে যাচ্ছি। আমার পরিবারে ৮ জন মানুষ আছে সবাই আমার উপর নির্ভরশীল, আমার কারনে কোম্পানির সম্মান নষ্ট হচ্ছে অভিযোগ এনে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই ৩ মাস ধরে আমি খুবই মানসিক ভাবে কষ্টে আছি।  

তিনি আরও বলেন, আমাকে দিয়ে সাইফুল স্যার জমির কাজ করাতেন, বাসার কাজ করাতেন। এসব করতে অস্বীকৃতি জানালে হাজিরা কেটে দিতেন। এমনকি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি করে দিতেন। আমরা প্রতিটা কর্মীদের তিনি মানুষিকভাবে টর্চার করতেন। তিনি আরো বলেন, ৫ দিন ওভার টাইম ডিউটি করলে প্রতিটা কর্মী সাইফুল স্যারকে ৫০০ টাকা করে দেওয়া লাগতো। অর্থাৎ প্রতি ৫ টা অভার টাইম ডিউটি করলে থাকে ১ টা ডিউটির টাকা দিতে হতো  নাহয় চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন। হাজার টাকার বিনিয়ে তিনি ভালো যায়গাতে রোস্টার পরিবর্তন করে দিতেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। 

নিরাপত্তা কর্মী আলমাস হাসান বলেন, সাইফুল ইসলাম একজন অমানবিক মানুষ। আমার একজন বন্ধু হার্টের চিকিৎসার জন্য ৩ মাসের ছুটি নিয়েছিলেন।  ফিরে এসে দেখেন থাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত করে খালি পোস্ট তৈরি করে তিনি লাখ টাকার বিনিময়ে অন্য লোকদের নিয়োগ দিতেন। তিনি আরো বলেন, টাকার বিনিময়ে কর্মীদের বিভিন্ন ভালো যায়গায় তিনি পোস্টিং দিতেন। তার মতের উল্টো হলেই চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন এজন্য কেউ ভয়ে কথা বলতেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে সিনিয়র এই কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা। 


সর্বশেষ সংবাদ