পদত্যাগের হিড়িকে ফাঁকা প্রশাসন, অচলাবস্থা হাবিপ্রবিতে

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একের পর এক পদত্যাগে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রশাসনিক ৫১টি পদে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে ৪৯ জন পদত্যাগ করেছেন। প্রক্টরিয়াল ও ছাত্র পরামর্শক বডি পদত্যাগ করায় শৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে উপাচার্যের (ভিসি) পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান। তারপর পরই শুরু হয় পদত্যাগের হিড়িক। একে একে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক, ছেলেদের আবাসিক হলের সব হল সুপার পদত্যাগ করেন। মাঝে কিছুদিন রেজিস্ট্রার কাজ চালিয়ে নিলেও শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়াতে জটিলতা সৃষ্টি হতে থাকে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল টিম, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা শাখার পরিচালক, আইকিউএসি, আইআরটি, পরিবহন শাখা, প্লানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট, পিআরপি পরিচালক, এক্সাম কন্ট্রোলার এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট অনুষদের ডিন পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন হলের হল সুপারসহ দপ্তর প্রধানরাও পদত্যাগ করেছেন। 

হাবিপ্রবিতে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলেন ৫১ জন শিক্ষক। এর মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ৪৯ জন। এতে প্রশাসনের অধিকাংশ পদ শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন শিক্ষার্থীরা।

গত ১৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওইদিন বেলা ৩টার মধ্যে আবাসিক হলসমূহ ফাঁকা করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর গত ১২ আগস্ট থেকে হল খুলে দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ১৪ আগস্ট থেকে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

হল খুলে দেয়ার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি হলে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সমন্বয়ে হলভিত্তিক টিম গঠন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ৫ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান হাবিপ্রবির ভিসি ড. এম কামরুজ্জামান। পরে গত ৯ আগস্ট তিনি চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

একই দিনে রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র দেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। এরপর প্রশাসনিক বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করতে শুরু করেন শিক্ষকরা।

ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল হাসান বলেন, দেশে চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রশাসন প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হাবিপ্রবির অবস্থা আরও মারাত্মক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, একাডেমিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় হাহাকার শুরু হয়েছে। সেশনজটের মতো গ্যাড়াকলে পড়ে একাডেমিক বর্ষের যে ভঙ্গুর ধারাবাহিকতা ছিল, সেটি আরো বেশি তীব্র হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাও কঠিন হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে হাবিপ্রবির মান উন্নত করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

কৃষি অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী  সাজিয়া আফরিন বলেন, করোনার সময় আমরা যে জটে পড়েছি, সেটায় এখনও ওভারকাম করতে পারিনি। কৃষি অনুষদ তীব্র জটে পড়েছি।অনেক ডিপার্টমেন্টের শেষ হয়ে গেলেও আমাদের পরীক্ষা বাকি। নভেম্বরের মধ্যে বের হতে না পারলে আমরা অনেক জবের সার্কুলার মিস করব। ৪৭তম বিসিএসও হয়তো মিস হবে। আমরা  ক্লাসে ফিরতে চাই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হাবিপ্রবিতে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলেন ৫১ জন শিক্ষক। এর মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ৪৯ জন। এতে প্রশাসনের অধিকাংশ পদ শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশাংকা করছেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন: ঢাবিসহ ১৬ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির পদত্যাগপত্র গ্রহণ রাষ্ট্রপতির 

এদিকে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, দেশের চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের  আবাসিক হলের হল সুপার ও সহকারী হল সুপাররা পদত্যাগ করেছেন। বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিক হলসমুহ খোলার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃংখলা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে  হলভিত্তিক টিম করেছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা বিধানে সার্বিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষক, কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। তবে একটি অনুষদের শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়াসহ নানা কারণে এ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। 

পদত্যাগের দু’দিন আগে রেজিস্ট্রার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি খুব অসহায়বোধ করছেন। পাশে কাউকে পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও প্রশাসনিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ উপাচার্য ছাড়া নেওয়া সম্ভব নয়। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবেও রাষ্ট্রপতি কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় জটিলতা আরও বেড়েছে। উপাচার্য না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট সভাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোও নেওয়া সম্ভব হবে না। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরুর বিষয়েও যেন  জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। 


সর্বশেষ সংবাদ