ছাত্ররাজনীতির প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থীদের অনীহার কারণ কী?

ছাত্ররাজনীতির প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থীদের অনীহা
ছাত্ররাজনীতির প্রতি বুয়েট শিক্ষার্থীদের অনীহা  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আবারও উত্তাল। ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে বাদ-প্রতিবাদে শুধু বুয়েট প্রাঙ্গণই নয়, গোটা দেশ, পত্রপত্রিকা, স্যাটেলাইট চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া মুখর। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে বহু যুক্তিতর্ক কয়েক দিন ধরে চলছে।

চার বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র আবরারকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তার তীব্র দাবিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল বুয়েট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি হাইকোর্ট এ সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিলেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি থেকে সরে আসেননি।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির চলমান বিতর্কের আবহে শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতির প্রতি অনীহার প্রশ্নটি আলোচিত হয় ডয়চে ভেলে বাংলার সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশো ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানের এবারের পর্বে।

এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এই পর্বে আলোচনার মূল প্রশ্ন ছিল যে, বুয়েটের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অধিকাংশ আসলে কী চায়?

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি জরিপ বিষয়ে। খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জনমত নিরীক্ষণের জন্য দুইদিনব্যাপী সমীক্ষা প্রচার করেছেন, সর্বমোট ৫৮৩৪ জন বুয়েট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৮৩ জন, অর্থাৎ ৯৭%।

সঞ্চালক প্রশ্ন করেন যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা রাজনীতির প্রতি এই প্রবল অনীহার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জরিপে যারা অংশ নিয়েছে, তারা রাজনীতিকে বর্তমানে যেভাবে দেখছেন, তার ভিত্তিতে মতামত দিচ্ছেন। ৯৭% শিক্ষার্থী মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত। তারা রাজনীতির বিরুদ্ধে নয়, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে। এই অপরাজনীতিটিকেই মনে হচ্ছে রাজনীতি। এই অপরাজনীতি এখন এতটা ছড়িয়ে গেছে, প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় তা দেখতে পাচ্ছি। ফলে, জনমনে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে যে এটাই রাজনীতি। সুষ্ঠু রাজনীতি, সঠিক রাজনীতি যদি আনা যায়, তাহলে এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে। আর তারা এখন যেভাবে আন্দোলন করছে, সেটাও তো রাজনীতির অংশ।

একই প্রসঙ্গে অধ্যাপক আইনুন নিশাত তুলে ধরেন বিকল্প রাজনীতি চর্চার প্রয়োজনীয়তার দিকটি। এমন ব্যবস্থা বাংলাদেশে সম্ভব কি না সেই প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, সম্ভব হতে হবে, অন্য কোনো উপায় নেই। শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হলে করতে হবে। হ্যাঁ, অনেক বাধা আছে, রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র সংগঠনকে তাদের শক্তি নয়, অপশক্তি হিসাবে ব্যবহার করে। শক্তি হিসাবে ব্যবহার করেনা। অল্প দিন এই শক্তির পুরস্কার পায় বলেই সমাজের অধঃপতন হয়। বুয়েটে আমি মনে করি এখনও সুযোগ আছে।


সর্বশেষ সংবাদ