পাবিপ্রবিতে ছাত্রদলের এক আহ্বায়ক কমিটিতেই তিন বছর
- পাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ১০:২৩ PM , আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১০:২৬ PM
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের তিন বছর হয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়নি সংগঠনটি।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদ-প্রত্যাশীরা। তারা আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং এ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার দাবি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৬ জুন গণিত বিভাগের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক লিমনকে আহ্বায়ক এবং আইসিই বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সানজিদ প্রান্তকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর থেকে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হতে দেখা গেলেও সেটি ছিল পাবনা শহর কেন্দ্রিক। এই সময়ের মধ্যে সংগঠনটির ক্যাম্পাসে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করেননি। তিন মাসের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটিকে হল ও অনুষদীয় কমিটি করার নির্দেশনা থাকলেও সেটি করেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০ জানুয়ারি। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৮ সদস্যের কমিটি এবং তিনটি অনুষদের কমিটি করলেও সেটি বাইরে প্রকাশ করেননি সংগঠনটি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একটি সূত্র বলছে, আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর সাধারণ নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হলেও সেটা বেশিদিন টেকেনি। নতুন কমিটির কার্যক্রম ছিল পাবনা শহর কেন্দ্রিক হওয়াতে ক্যাম্পাসে কারা ছাত্রদল করে, ছাত্রদলের কমিটি আছে কিনা সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীই জানতোনা। নতুন কমিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হল, অনুষদ ও বিভাগভিত্তিক শাখাগুলোকে সক্রিয় করার নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও তারা সেটি করতে পারেননি। ফলে নেতা কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশাও তৈরি হয়। কমিটির শুরুর দিকে নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাসে দেখা গেলেও ২০২২ সালে সংগঠনটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফসিউল আলম এবং মইন উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করলে ক্যাম্পাসে আনাগোনা কমিয়ে দেন নেতা-কর্মীরা।
গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার বিরোধী আন্দোলনে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদলের ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক তৎপরতা দেখা গেলেও পাবিপ্রবিতে সেটা দেখা যায়নি। পাবনা শহরে সংগঠনটির সরকার বিরোধী কার্যক্রম দেখা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোন মিছিল মিটিং দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ৩১ সদস্যের কমিটির বর্তমানে অল্প কিছু সদস্য রাজনীতিতে সক্রিয়। বাকিদের কারো পড়াশোনা শেষ, কেউ সরকারের দমন-নিপীড়নের ভয়ে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় আছেন। সংগঠনটির আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের পড়াশোনা শেষ হয়েছে করোনার পরপরই। তারা এখন ক্যাম্পাসে আসেন না। যার কারণে সংগঠনটির ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক কোন কার্যক্রম নেই।
সংগঠনের এই অবস্থার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবি জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদ প্রত্যাশী বলেন, ‘সরকারের দমন-নিপীড়নের কারণে কমিটির অনেক সদস্যই বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এই অবস্থায় সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া প্রয়োজন।’
আরেক পদ প্রত্যাশী বলেন, ‘তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারা কেন্দ্রীয় কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির ব্যর্থতা। সরকারের দমন-নিপীড়ন ছিল কিন্তু কমিটি দেওয়া উচিত ছিল কারণ অনেকেই দীর্ঘদিন সংগঠন করেছেন কিন্তু পদ ছাড়াই বিদায় নিয়েছেন।’
তবে ক্যাম্পাসে কাজ করতে না পারা এবং নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তার জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মারমুখী আচরণকে দায়ী করছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব সানজিদ প্রান্ত। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা মিনি ক্যান্টনমেন্ট তৈরি করে রেখেছেন। যার কারণে ক্যাম্পাসে আমরা কোন কার্যক্রম চালাতে পারিনি। ক্যাম্পাসে আমাদের নেতা-কর্মীদের ছাত্রলীগ মেরেছে কিন্তু প্রশাসন তার বিচার করেননি। এরপরও আমরা নিষ্ক্রিয় ছিলাম না। ক্যাম্পাসে কাজ করতে না পারলেও ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করেছি। শেষে এসে আমরা হল এবং অনুষদীয় কমিটি করে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। প্রতিনিয়ত সরকার আমাদের দমন-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন কমিটি হওয়ার পর আমরা ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সবগুলো শাখাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমরা আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাবিপ্রবি ছাত্রদলের নতুন কমিটির বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো’।