নিখোঁজের আগে মেয়েবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলেন বুয়েটছাত্র পরশ

  © সংগৃহীত

গত শুক্রবার (৪ নভেম্বর) নিখোঁজ হন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর। পরদিন শনিবার সকালে ল্যাবে তাদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ছিল। তাই শুক্রবার ফারদিন তার এক বন্ধুকে ফোন করে জানিয়েছিলেন রাতে হলে এসে থাকবেন। পরদিন সকালে পরীক্ষায় অংশ নেবেন। কিন্তু এদিন ফারদিন বাসা থেকে বের হলেও হলে আসেননি এবং পরীক্ষায় অংশ নেননি। ঘটনার তিন দিন পর সোমবার (৭ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

নিহতের পিতা কাজী নুর উদ্দিন সপরিবারে রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া শান্তিবাগ এলাকায় বসবাস করতেন। ওই ঘটনায় তার বাবা রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। ফারদিন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি একটি আবাসিক হলে থেকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। 

নিখোঁজের দিন ফারদিন নূর কোনাপাড়ার বাসা থেকে বুয়েট আবাসিক হলের উদ্দেশে বের হয়ে যান।ফারদিনের সহপাঠী শরিফুজ্জামান শাফী বলেন, শনিবার সকালে ল্যাবে তাদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ছিল। শুক্রবার ফারদিন তাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন রাতে হলে এসে থাকবেন। পরদিন সকালে পরীক্ষায় অংশ নেবেন। কিন্তু শুক্রবার ফারদিন বাসা থেকে বের হলেও হলে আসেননি এবং পরীক্ষায় অংশ নেননি। পরীক্ষা দিতে না আসায় তারা পরিবারকে জানান।

ফারদিনের চাচা আবু ইউসুফ বলেন, ফারদিন শুক্রবার বাসা থেকে বের হয়ে বিকেলে তার এক মেয়েবন্ধুর সঙ্গে রিকশায় ধানমন্ডিতে একটি রেস্তোরাঁয় যান। সেখান থেকে তারা নীলক্ষেত গিয়েছেন। সেখান থেকে তারা আবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বনশ্রীতে ওই মেয়েবন্ধুর বাসার কাছে গিয়েছেন। ওই মেয়েবন্ধু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, ডিবেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত।

আবু ইউসুফ বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত ও যারা দোষী, তাদের বিচার চান তিনি। এ রকম ঘটনা আর যাতে না ঘটে। আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। বুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, তারা এ বিষয়ে সরকারের কাছে যেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায়, যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।

ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা কাজী নূরউদ্দিন। তিনি বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’–এর সম্পাদক ও প্রকাশক। বলেন, সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছি। ভালো মানুষ হিসেবে সে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারবে—তেমন একটি জায়গায় যাবে, সেটি চেয়েছি। এমন মৃত্যু কখনো কাম্য ছিল না।

ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন। কাজী নূরউদ্দিনের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ফারদিন নুর। মেজ ছেলে আবদুল্লাহ্ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ছেলে তামিম নূর এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

পড়াশোনায় মেধাবী ফারদিন এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। গবেষণার বিষয়ে আগ্রহ ছিল তার। নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও সচেতন ছিলেন উল্লেখ করে কাজী নূরউদ্দিন বলেন, ওর নিজের ইচ্ছায় বুয়েটে ভর্তি হয়েছে। আমরা ওরে স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে দিয়েছি। যেহেতু আমি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলাম, তাই খুব একটা সচ্ছল ছিলাম না, ফারদিন নিজে টিউশনি করত। নিজের পড়াশোনা, পড়ানো, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আসা–যাওয়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ড করত।

ফারদিন সাঁতার জানতেন না জানিয়ে বাবা বলেন, এখানে তার (ফারদিন) আসার কথা নয়। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তার ছেলেকে এখানে এনে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তিনি ছেলে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।

এদিকে, নিখোঁজের পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করা হলে তার সঙ্গে থাকা মুঠোফোন, ব্লুটুথ ও মানিব্যাগ সবকিছুই পাওয়া গেছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, লাশ ফুলে গেছে। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, দু–এক দিন আগে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence