যবিপ্রবিতে বিষ প্রয়োগে ১৮ কুকুর হত্যা, জানে না কর্তৃপক্ষ

কুকুর হত্যা করে ফেলা হয়েছে গর্ত
কুকুর হত্যা করে ফেলা হয়েছে গর্ত  © সংগৃহীত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে নির্মমভাবে ১৮টি কুকুর হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রাণিগুলো হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের পিছনে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কমিটির অগোচরে রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নির্দেশনায় ১৮টি কুকুরকে হত্যা করা হয়েছে। জাকির মিয়া নামে চুয়াডাঙ্গার এক ব্যক্তি বলেন, কুকুর নিধনের জন্য দুই হাজার টাকার চুক্তিতে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নির্দেশনায় তিনি কুকুর হত্যা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কুকুর মারতে নির্দেশ দেয়নি। কে বা কারা মেরেছে আমি তাদের চিনি না। আমি প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে প্রোগ্রামে ব্যস্ত ছিলাম।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কুকুর হত্যার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসান মোহাম্মদ আল ইমরান গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছুটিতে ছিলেন জানিয়ে বলেন, পূজার ছুটি শেষ হলে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন। তিনি জানান, এর আগে একদল কুকুর বাচ্চাদের দেখে তাড়া করতো। তখন কুকুরগুলো বাইরে দিয়ে আসা হয়। একবার এক আনসার সদস্যকে কামড়ালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে তখনও কোনো কুকুরকে মারা হয়নি। কুকুর নিধন দেশের আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষেধ।  তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কমিটি প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে কিন্তু তারা ভ্যাকসিন দেয়নি এবং কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি।

প্রাণী কল্যাণ বিল-২০১৯ এ বলা হয়েছে, মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কোন প্রাণীকে হত্যা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল হবে। পাশাপাশি কুকুরকে চলাফেরার সুযোগ না দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বেঁধে রাখলেও তা নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে এবং একই শাস্তি হবে।

বুধবার বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জলাতঙ্ক মুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যেও আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা সরবরাহ করছি। ব্যাপক হারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আক্রান্তদের চিকিৎসা ও টিকা প্রদানের পাশাপাশি কুকুরের টিকাদান এবং সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশকে জলাতঙ্কের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’

এদিকে ক্যাম্পাসে কুকুর হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আইপিই বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে 'কুকুর নিধন’ এর নামে ১৮টি কুকুর হত্যার অধিকার কে দিল? একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নির্মমতার দায় কার? ক্যাম্পাসে সমাধান না হওয়া এতো শতো সমস্যা বাদ দিয়ে কুকুরের পেছনে কেনো?’

ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী ইসমাইল রহমান ফেসবুক পোস্টে বলেন, সবার কাছে ডেভিড নামে পরিচিত হলেও আমরা ইএসটিয়ান রা জেম বলেই ডাকতাম। জেম অনেক প্রিয় ছিল আমাদের একজন বড় ভাইয়ের। সবসময় চেষ্টা করতাম আমরা আসে পাশে থাকলে কিছু খাওয়ানোর। প্রতিদানও সে ভালোভাবেই দিত সঙ্গ দিয়ে। কুকুর দেখে আমার ভয় ছিল সারাজীবনই। কিন্তু যবিপ্রবির কুকুরগুলো দেখে সেই ভয় আমার কেটে গেছে। আমার জানামতে আজ অবধি শুনিনি যবিপ্রবির কুকুর কামড় দিয়েছে কোনো ছাত্রকে। একবার ফুটবল খেলার সময় জেম এর লেজে পা পড়ে গেছিলো ভুল করে। আক্রমণ করেনি সে।

আরো পড়ুন: প্রকাশ্যে শাকিব-বুবলীর ছেলে, ঘোষণা আসতে পারে আজ

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কুকুর হত্যা কোনো সমাধান নয়। সব জীবনেই মূল্যবান। বন্ধ্যাকরণের মাধ্যমে মানবিকভাবে কুকুর সংখ্যা কমান। রাতের অতন্দ্র প্রহরী হত্যা বন্ধ করুন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কমিটির প্রধান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মৌমিতা চৌধুরী বলেন, ‘কুকুর নিধনের বিষয়টি আমার জানা নেই।’ পরে খোঁজ নিয়ে জানানোর কথা থাকলেও পরবর্তীতে একাধিক বার ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাকিবুল হক এমিল বলেন, প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী কুকুর নিধন করা যাবে না। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহিরাগত কেউ এসে ন্যাক্কারজনক ও বেআইনিভাবে গণহারে কুকুর নিধন করল। অথচ কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ এবং দায় এড়াচ্ছেন এটা হতেই পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধের সাথেও এটা সাংঘর্ষিক। কাজেই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখার দায়িত্ব প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে নিতে হবে।

যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, 'কুকুর নিধন কারা করেছে তা নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে কেউই অনুমতি নেয়নি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ