প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে নতুন শিক্ষাক্রম

ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক
ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক  © ফাইল ছবি

দীর্ঘ এক  ‍যুগের বেশি সময় ধরে চলা সৃজনশীল পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে চলেছে শিক্ষাব্যবস্থা। আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে। এই ব্যবস্থায় শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম মুখ থুবরে পড়তে পারে। এই অবস্থায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়ার কথা বলেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিকের ৬২টি বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং চলছে। আগামী আগস্ট মাসে প্রাথমিকের ৬৫টি বিদ্যালয়ের পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের চারটি শ্রেণিতে একযোগে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে। এর আগে ডিসেম্বর মাসে শিক্ষকদের পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে এই প্রশিক্ষণকে অপর্যাপ্ত বলা হচ্ছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যার মূল কাজটি করতে হবে শিক্ষকদের। তবে আমাদের শিক্ষকদের এই বিষয়ে খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই। কেননা অধিকাংশ শিক্ষকের বিএড এবং এমএড বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। শিখনকালীন বিষয়ে জোর দিতে হলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

 এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি ভাবে সফল করতে হলে অবশ্যই শিক্ষকদের ভালো প্রশিক্ষণ দরকার। আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষকদের দুটো প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর পাশাপাশি শুধু মূল্যায়ন নিয়ে খুব শিগগিরই আরও একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেখানে শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং কীভাবে সেটি সামষ্টিক মূল্যায়নের সাথে সামঞ্জস্য হবে সে বিষয়টি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের বার্ষিক যে ফলাফল সেটি কীভাবে তৈরি করা হবে সে বিষয়ে হাতে-কলমে শেখানো হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শেখানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। তবে এটা ল্যাববেইজড কোনো ব্যবহারিক না। শিক্ষার্থীদের তাদের আশেপাশে যা দেখবে, দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হয় সেই বিষয়গুলো শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। ফলে আধুনিক ল্যাব না থাকলেও খুব একটা সমস্যা হবে না।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সংস্থাটির সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, নিচের শ্রেণিতেগুলোতে তারা শিখনকালীন মূল্যায়নের দিকে বেশি জোর দিয়েছেন। আর ওপরের শ্রেণিগুলোর কোনোটিতে মধ্যম পর্যায়ে এবং কোনোটিতে একটু কম গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিকবিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন থাকবে।  চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। ২০২৩ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের চার শ্রেণির মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। পরের বছর আরও দুটি শ্রেণি যুক্ত করা হবে। সবশেষ ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিকে যুক্ত করা হবে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এই প্রশিক্ষণ তাদের জন্য যথেষ্ট। আমরা আগামীতে আরও প্রশিক্ষণ দেব। তবে আমাদের অনেক শিক্ষক আছেন যারা নতৃন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয় পান। তাদের যতই প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক না কেন তারা নতুন কারিকুলামে যেতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরির কাজ শেষ করব। তারপর অক্টোবর ও নভেম্বরে ৬৪ জেলায় মাস্টার ট্রেইনার এবং সকল উপজেলা পর্যায়ে ট্রেইনার তৈরি করব। তারা আগামী নভেম্বরে সব শিক্ষককে ৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেবেন। এরপরও নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ চলতেই থাকবে। ফলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে কোনো ঘাটতি থাকবে না।


সর্বশেষ সংবাদ