যতটা সম্ভব এমপিও দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

কয়েক বছর এমপিওভুক্তি না করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণ সম্প্রতি বারবারই তাগাদা আসছে। যার সমাধান যেন ‘শেষ হয়েও হচ্ছে’ না। জুলাই মাসে এমপিওর কথা বলা হলেও এখনো বিষয়টির সুরাহা হয়নি। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে ওই অর্থে কেউই মুখ খুলছেন না। কঠোর গোপনীয় মেনে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি বিভাগ।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এমপিও বিষয়টি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই স্পর্শকাতর। আর এ কারণেই এমপিওর ক্ষেত্রে গত মার্চে অনুষ্ঠিত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কর্মসূচির বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে। সূত্রটির তথ্য, যত দ্রুত সম্ভব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব, এমপিও বেশি দেওয়া হবে।

সূত্রটির দাবি, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বরাদ্দৃকত বাজেটের তুলনায় বিশাল। এত সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া সম্ভব নয়। আবার যোগ্য-অযোগ্য প্রতিষ্ঠানও বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ, অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিলে শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট হবে। মূলত এসব নিয়ে সর্বশেষ আলোচনা হচ্ছে। এর ভিত্তিতেই যতদূর সম্ভব, নিয়ম মেনেও এমপিও দেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির সভাপতিত্বে এমপিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে নীতিমালার মধ্যে থেকেই স্কুল-কলেজ মাদরাসা এমপিওভ্ক্তু করার কথা বলা হয়। সেই সাথে চর, হাওড়-বাওড়, দুর্গম ও পাহড়ী এলাকা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য নীতিমালার ভেতরে থেকেই শর্ত শিথিল করার বিষয়ে নানা আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন ও কারিগরি বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ ও মন্ত্রণালয়ের একাধিক অতিরিক্তসচিবসহ মোট আটজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভায় নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়। একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে সব বিষয়ে অবহিত করলাম, নানা বিশ্লেষণ হলো, ফের বৈঠক হবে। নীতিমালার ভেতরে থেকেই সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।

এর আগে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, এমপিওর তালিকা এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে আসেনি। এখন প্রতিষ্ঠানের নাম যাচাই-বাছাই করছি। আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যেই এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে যেদিনই ঘোষণা করা হোক না কেন, ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকরের সিদ্ধান্ত আছে।

তথ্যমতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সর্বশেষ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ১৮০টি। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি, মাদ্রাসা সাত হাজার ৬১৮টি। সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।

এদিকে নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে না পারলেও শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় মন্ত্রী-এমপিরা পেতে পারে বিপুলসংখ্যক অখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও গুটিয়ে আনা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্ষমতাসীন দলীয় সাংসদদের কাছ থেকে এরইমধ্যে শতাধিক আধা সরকারি পত্র (ডিও) লেটার নেয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কয়টি প্রতিষ্ঠানকে এই বিশেষ ক্যাটাগরিতে এমপিও দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর তা জানা যাবে। 

জানা গেছে, এমপিও দেয়ার ক্ষেত্রে চরাঞ্চল, দুর্গত, নারী শিক্ষাসহ আরও কয়েকটি ক্যাটাগরি বিশেষ বিবেচনায় রাখতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দিয়েছেন তারা। গত সপ্তাহ পর্যন্ত শতাধিক এমপি প্রায় আড়াই শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিও দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। ডিও লেটারে এমপিরা এসব প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করেছেন। এসব প্রতিবন্ধতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার কারণে এমপিওভুক্তির নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সেজন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিও দেয়ার প্রয়োজন বলেও মনে করেন আইন প্রণেতারা। 

নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের আগস্টে আবেদন নেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী এমপিওভুক্তির চার শর্ত হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক উপজেলায় একটি প্রতিষ্ঠানও ফিটলিস্টে স্থান পায়নি। আবার একই উপজেলা থেকে ৮-১০টি প্রতিষ্ঠানও জায়গা পেয়েছে। 

তথ্যমতে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগও আলাদাভাবে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি করছে। এতে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ৬১৫টি, মাধ্যমিক স্কুল ৭৯৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯১টি ও ডিগ্রি কলেজ ৪৪টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ তালিকায় আরও আছে দাখিল মাদরাসা ৩৬২টি, আলিম মাদরাসা ১২২টি, ফাজিল মাদরাসা ৩৮টি এবং কামিল ২৯টি। সবমিলে ২ হাজার ৭৬২টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এমপিওভুক্তির যোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে; যা যাচাই-বাছাই শেষে বাড়তে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ