স্কুলের ইসলাম-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ শিক্ষায় ১১তম, হিন্দুতে ১০ম গ্রেড দেওয়ায় ক্ষোভ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪২ PM , আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৭ PM
বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুলের ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে হিন্দু ধর্মের উপাধিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।
রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত সংশোধিত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২৫ এ হিন্দু ধর্মের উপাধি পাওয়া শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এটিকে বৈষম্যমূলক বলে জানিয়েছেন অন্য ধর্মের শিক্ষকরা।
সংশোধীত এমপিও নীতিমালার পরিশিষ্ট ঘ-তে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নিয়োগ-যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও বেতন স্কেলের ২২ নম্বরে সহকারী শিক্ষক ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার যোগ্যতা ও বেতন কাঠামো নিয়ে বলা হয়েছে।
নীতিমালায় ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে (স্বীয় ধর্মের) বেতন গ্রেড-১১ (১২৫০০-৩০২৩০/-) উল্লেখ করা হয়েছে। যোগ্যতার ঘরে ফাজিল ডিগ্রি অথবা ন্যূনতম ৩০০ নম্বরের আরবী/ইসলামী শিক্ষাসহ স্নাতক ডিগ্রি থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে (স্বীয় ধর্মের) উপাধি ডিগ্রিসহ স্নাতক ডিগ্রি/সমমানদের ক্ষেত্রে বেতন ১০ম গ্রেডে উল্লেখ করা হয়েছে। উপাধি ছাড়া সংস্কৃত বিষয়সহ স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে ১১তম গ্রেডই উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক (ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) ইসলাম ধর্মের শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১১তম গ্রেড এবং হিন্দু ধর্মের শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১০ম গ্রেড প্রদান করা হয়েছে। এটা চরম বৈষম্য। মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে ইসলাম ধর্মের শিক্ষকের প্রতি এই অবহেলা কেন? অবিলম্বে বৈষম্য দূর করে নীতিমালা সংশোধন করতে হবে। সকল সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়া হোক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মাউশির সুপারিশের প্রেক্ষিতে উপাধি ডিগ্রি নেওয়া হিন্দু ধর্মের শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের বিষয়টি নীতিমালা উল্লেখ করা হয়েছে।’
জানা গেছে, ২০১৩ সালের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে উপাধিপ্রাপ্ত হিন্দু ধর্ম শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়া হত। কিন্তু ২০১৮ সালের জনবল কাঠামোতে হিন্দু ধর্ম শিক্ষকরা বিএড করে উপাধি পেলে ১০ম গ্রেড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছিল।
২০২১ সালের মার্চে জারি করা এমপিও নীতিমালায় উপাধি ডিগ্রি ও স্নাতক ডিগ্রি পাওয়া হিন্দুধর্ম শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আগের ১১তম গ্রেডেই বেতন পাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হলেও সে বিষয়ে কোনো সমাধান আসেনি। শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালের সংশোধিত এমপিও নীতিমালায় উপাধিপ্রাপ্ত হিন্দু ধর্ম সব শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে বেতন দেওয়ার বিষয়টি ফের উল্লেখ করা হল। তবে বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক জানিয়ে সব সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।