আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধিমালার খসড়া

সরকারি নীতির সমালোচনা করতে পারবেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষা মন্ত্রণালয়  © ফাইল ছবি

গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের দলসহ) সরকারের নীতি বা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে পারবেন না বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীরা। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ, শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা-২০২৪ এর খসড়ায় এ কথা বলা হয়েছে। সরকার বা জনগোষ্ঠীর কোন অংশের বিরুদ্ধে অন্তুষ্টি সৃষ্টি, ভুল বুঝাবুঝি বা বিদ্বেষ সৃষ্টি বা এতদুদ্দেশ্যে কাউকে প্ররোচিত করলে শাস্তির আওতায় আসবেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

বুধবার (৫ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত খসড়াটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর নীতিমালার ওপর অংশীজনদের মতামত চাওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। 

সামাজিক ক্ষেত্রের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যৌতুক দেওয়া বা নেওয়া বা যৌতুক দেওয়া বা নেওয়ায় প্ররোচিত করা; অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, কন্যা বা বরের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের নিকট যৌতুক দাবি করা। অভ্যাসগত ঋণগ্রস্ত হওয়া। এমন কোন কার্যে সম্পৃক্ত হওয়া যা পদমর্যাদার জন্য সম্মান হানিকর। 

কোনও উপদলীয় ধর্মীয় মতবাদ প্রচার, এরূপ বিতর্কে অংশগ্রহণ বা অনুরূপ মতবাদের পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না।  মহিলা সহকর্মী, ছাত্রী, শিশুদের প্রতি এমন কোন ভাষা ব্যবহার বা আচরণ করা যা অনুচিত ও শিষ্টাচার বর্জিত এবং মর্যাদার জন্য হানিকর। আদালতের কোন রায় বা সরকারের কোন নীতি বা সিদ্ধান্তের প্রতি প্রকাশ্য সমালোচনা করা।

বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ‘প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক বা অন্য কোন বহিঃপ্রভাব আনয়ন বা আনয়নে সহায়তা করা, যা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ হানিকর বিবেচিত হয়; রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কার্যাদি ব্যতিত অন্য কোন কাজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করা; সরকার কর্তৃক লিখিতভাবে প্রদত্ত কোন দায়িত্ব পালনে, অবহেলা বা অনীহা প্রকাশ করা যাবে না।

কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ব্যতিত প্রতিষ্ঠানে বা শ্রেণীকক্ষে বা অর্পিত দায়িত্ব হতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকা; বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সহকর্মী বা শিক্ষার্থীদের প্রতি অসম্মানজনক কথা বলা বা ইঙ্গিত প্ৰকাশ করা; সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা; সরকারের কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত কোন আইন, বিধিমালা, নীতিমালা, নির্দেশিকা, অফিস আদেশ, প্রজ্ঞাপন ইত্যাদি লংঘন, নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে শাস্তির আওতায় পড়তে হবে।

আর্থিক ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সরকারের লিখিত অনুমতি ব্যতীত কোন ধরণের চাঁদা বা তহবিল সংগ্রহে যুক্ত হওয়া; প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তিকে অর্থ ধার প্রদান বা অর্থ ধার গ্রহণ অথবা তাঁর নিকট নিজেকে আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ করা; প্রতিষ্ঠানের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাত বা আত্মসাতে সহযোগীতা করা; ফটকা কারবারে যুক্ত হওয়া; প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালার বিধান অমান্য করা; তিনি প্রকাশ্য আয়ের সাথে সংগতিবিহীন জীবনযাপন করা; প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরণের দূর্নীতি বা অনিয়ম করা; উপহার বা অর্থ গ্রহণ করে কাউকে অনায্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করলে শাস্তি পেতে হবে। 

নীতিমালার অন্যান্য ঘরে বলা হয়েছে, ‘অভিযুক্তের বিষয়ে কোন আদালত বা দুর্নীতি দমন কমিশনে অন্য কোন কার্যধারা চলমান থাকলে, এই বিধিমালার আওতায় ব্যবস্থা নিতে কোন বাঁধা থাকবে না। কোনো শিক্ষক কর্মচারী দেনার দায়ে কারাগারে আটক থাকলে, অথবা কোনো ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হলে বা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হলে, পরিচালনা কমিটিকে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অনুমোদনক্রমে উক্তরুপ আটক, গ্রেফতার বা অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন হতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে। 

কোনও ব্যক্তি কোনো আদালতে ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা এক বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হলে এবং আপীলের সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে, আদালতের রায়ের বিষয়টি সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে দন্ডিত ব্যক্তিকে সরাসরি প্রতিষ্ঠান হতে বরখাস্ত করতে হবে। অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের ফলে যদি পরিচালনা কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়, এতে তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত হতে পারে তবে তাঁকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা যাবে। 

এ সময় তিনি মূল বেতনের অর্ধহারে খোরপোশ ভাতা পাবেন এবং অন্যান্য ভাতাদি পূর্নহারে পাবেন। তবে সাময়িক বরখাস্তের সময়কাল কোন ক্রমে ৬০ কার্যদিবসের অধিক হবে না। এ বিধিমালার আওতায় কোন কার্যক্রম শুরু হলে তা আবশ্যিকভাবে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ সময়সীমা অতিক্রম করলে সমস্ত কার্যধারা বাতিল বলে গণ্য হবে।

আরো পড়ুন: বেসরকারি শিক্ষকদের আচরণ বিধিমালার খসড়া প্রকাশ, যা মেনে চলতে হবে

বিধিমালার কোনো ধারা লংঘিত হলে বর্ণিত Intermediate and Secondary Education Ordinance, 1961 ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (সংশ্লিষ্ট) (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০২৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া কোন অভিযোগ পেলে আঞ্চলিক পরিচালক বা আঞ্চলিক উপপরিচালক অধবা জেলা শিক্ষা অফিসার তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন (সংশ্লিষ্ট) শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করবেন। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (সংশ্লিষ্ট) শিক্ষা বোর্ড Intermediate and Secondary Education Ordinance, 1961 ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (সংশ্লিষ্ট) (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০২৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

সর্বশেষ সংবাদ