আসন্ন বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে

আসন্ন বাজেটেও সরকার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সম্পূর্ণরূপে স্থবির হয়ে পড়া এ খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৮৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ছয় হাজার ২৭৪ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় আট হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেশি।

আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার কথা। সবকিছু ঠিক থাকলে অর্থমন্ত্রী ওই দিন দ্বিতীয়বার বাজেট পেশ করবেন। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শীর্ষক এই বাজেট প্রস্তাবে পাাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদিও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। সরকার জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী টেলিভিশনে পাঠদান করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার ঘাটতি কমিয়ে আনতে দূরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। শিক্ষা খাতে এ ধরনের কিছু বরাদ্দ থাকবে বলে জানা গেছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের আক্রমণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টালমাটাল হলেও এ খাতে বরাদ্দ খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী, যা প্রস্তাবিত বাজেটের পাঁচ দশমিক ১৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় মাত্র পাঁচ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা বেশি। করোনা পরিস্থিতিতে এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে অর্থ অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বাজেটে বেশকিছু কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আর্থ-সামাজিক খাতে করোনাভাইরাসের যে প্রভাব, তা মোকাবিলায় অন্যান্য খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

এছাড়া বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ৩৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হচ্ছে। পেনশন ও গ্র্যাচুইটিতে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি, সুদ বাবদ ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি, শেয়ার ও ইক্যুইটি বিনিয়োগ বাবদ ২৭ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে সরকার ৩২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রয়েছে ৩১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষি খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বেড়ে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে।

জ্বালানি খাতে বরাদ্দে বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। মাত্র ৭০৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা করা হচ্ছে। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে আগামী বাজেটে ৬৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রয়েছে ৫৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৩৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে থাকছে ৩৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ২৮ হাজার ৬৮৮ কোটি এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এ ছাড়া জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ থাকছে এক লাখ ৮০ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।


সর্বশেষ সংবাদ