কেন ভাইরাল ‘খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে’?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৭ PM , আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৭ PM
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জুড়ে ইদানিং বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটি কথাকে বিদ্রুপাত্মক অর্থে বা ব্যঙ্গ করে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। আর সেটা হল, ‘এই মনে করেন ভাল লাগে, খুশির ঠ্যালায়, ঘোরতে।’
হঠাৎ এই সংলাপটি নিয়ে ইউজারদের মধ্যে কেন এতো মাতামাতি? এই লাইনটি এলো কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।
মূলত বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভির একটি সরাসরি সম্প্রচারিত প্রতিবেদন থেকেই এই লাইনটির সূত্রপাত।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় ঢাকার-৫ আসনের দনিয়া একে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের ভোটের চিত্র নিয়ে খবর সংগ্রহ করছিলেন মাই টিভির সাংবাদিক মাহবুব সৈকত। লাইভ সম্প্রচারের এক পর্যায়ে তিনি ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন নারীর কাছে জানতে চান যে তাদের হাতে ভোট দেয়ার অমোচনীয় কালি দেয়া আছে, অর্থাৎ তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও তারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে এক নারী তখন বলেছিলেন যে, ‘ই থাকতে মনে করেন। খুশিতে ঠ্যালায়, ঘোরতে।’ সে সময় এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে কম-বেশি শেয়ার হয়েছে ঠিকই। তবে এবার এই ভিডিওর চাইতে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, সেই নারী ভোটারের উদ্ধৃতিটি।
গত বছরের ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়ে গেল, সেই প্রেক্ষাপটে আবারও এই নারী ভোটারের উদ্ধৃতি ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কয়েকটি মিউজিক্যাল ডাবিং অ্যাপ বিষয়টিকে আরও নজরে আনে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মাহবুব সৈকত জানান, তিনি যখন খবর সংগ্রহের কাজটি করছিলেন তখন তিনি ভাবতেও পারেননি তার এই প্রতিবেদনটির একটি অংশ নিয়ে এতোটা আলোচনা হবে। তা-ও আবার প্রতিবেদন প্রকাশের পাঁচ বছর পর। সৈকত বলেন, ‘আসলে যখন আমরা সংবাদ সংগ্রহে যাই তখন আমরা বস্তুনিষ্ঠ-ভাবে খবর সংগ্রহের কাজেই থাকি। এখন পরবর্তীতে এটা নিয়ে আলোচনা হবে কি হবেনা সেটা মাথায় থাকেনা।’ ‘তবে রিপোর্টটি নিয়ে এতো বছর পর এইরকম আলোচনা হবে ভাবিনি।’
তবে সৈকতের প্রত্যাশা কেউ যেন তার খবরটিকে পক্ষপাতদুষ্ট বা নেতিবাচক না ভাবেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘একজন রিপোর্টারের কাজ সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাদের কথাগুলোকে সামনে আনা। আমি সেটাই করেছি। এর পেছনে আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না।’ এখন একেকজন মানুষ বিষয়টিকে একেকভাবে নেবে। তবে আমি আশা করবো আমার রিপোর্টের একটা উদ্ধৃতি নিয়ে হাসি ঠাট্টা যাই হোক, সেটা নিয়ে যেন কোন পক্ষপাতমূলক বা নেতিবাচক আলোচনা না হয়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে বিষয়টিকে নিয়ে নানা আঙ্গিকে ট্রল করছেন ইউজাররা। কেউবা নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা ইভেন্টের বিবরণীতেও ব্যাঙ্গ করে এই লাইনটি দিয়ে প্রকাশ করছেন তাদের মনের ভাষা।
ফেসবুকে বেশ কয়েকজনকে দেখা যায়, সমাজে প্রচলিত বা অযাচিত কিছু প্রশ্ন লিখে, উত্তর হিসেবে তুলে ধরছেন এই লাইনটি। ঠিক যেমনটা জাফরিন হক লিখেছেন, ‘মার্কেটিং জবে তো প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়, তুমি মেয়ে হয়ে মার্কেটিংয়ে জব করো কেন?’ এ.এ এ.. মনে করেন, খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে।"
এই পোস্টের ব্যাপারে জাফরিন হক বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই মানতে পারে না যে, মেয়েরা ডেস্কজবের বাইরে কোন চাকরি করবে। তখন তারা এই ধরণের প্রশ্ন করে বসে। সেইসব প্রশ্নদাতার উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্গ করেই পোস্টটা দিয়েছি।’
অরুপ রতন চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছিল এমনই আরেক ধরণের প্রশ্নকে ঘিরে, ‘তুমি তো বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিও করতে পারতা; সিনেমাতে কাজ কর কেন? আমি- এই মনে করেন ভাল্লাগে। খুশির, ঠ্যালায়, ঘোরতে!’ ‘-ঢাকায় এতো জায়গা থাকতে মিরপুরে থাকেন কেন?- ‘এই মিরপুরে থাকতে মনে করেন ভাল্লাগে। খুশিতে, ঠেলায়, ঘোরতে’।
এমনই আরও নানা আঙ্গিকের প্রশ্ন-উত্তর, বা পোস্টে এই একটি উদ্ধৃতিকে ঘিরে চলছে ঠাট্টা ও আলোচনা। [বিবিসি বাংলা]