আলু, পেঁয়াজ ও চালের বাজারে উত্তাপ, কিছুটা স্বস্তি সবজিতে

আলু-পেঁয়াজ-চাল দাম বাড়তি
আলু-পেঁয়াজ-চাল দাম বাড়তি  © ফাইল ফটো

বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আলু, পেঁয়াজসহ সব ধরনের চাল। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে আলুর দাম। আর ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এখনো ঊর্ধ্বমুখী  চালের দাম। তবে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে কমতে শুরু করেছে বেশিরভাগ শাক-সবজির দাম।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কেজিতে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে মিসরের পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

গালিব তালাল নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, আলুর দাম ৭০ টাকা, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। একই অবস্থা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। কিন্তু দুটি পণ্য এতটাই প্রয়োজনীয় যে বাজারে এলে কিনতেই হয়। বিকল্প কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, মাসে পরিবারের যদি পাঁচ কেজি আলু আর পাঁচ কেজি পেঁয়াজ লাগে- এ জন্যই ব্যয় করতে হবে এক হাজার টাকা। এটা কি স্বাভাবিক কথা!

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলু-পেঁয়াজের মৌসুম এখন শেষের দিকে। প্রতি বছর এ সময়ে দাম বাড়ে। তবে এ বছর শুরু থেকে দাম চড়া। এরপর এখন বেড়ে আরও বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির বিক্রেতা জানান, নতুন করে আর না বাড়লেও চালের দাম কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আমন ধান উঠা শুরু হলে বাজারে দাম কমতে শুরু করবে।

আরও পড়ুন: ট্যাক্স কমিয়েও নিত্যপণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না: অর্থ উপদেষ্টা

বাজারে এখনো চড়া চালের দাম। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে মোটা চালের দর কেজিতে ৫২-৫৫ টাকা, আর চিকন চাল ৬৮-৮০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১.৯ শতাংশ ও ২.৭৮ শতাংশ।

 বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন শাকসবজি। দোকানগুলোয় শীতের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে কমতে শুরু করেছে অস্থিরতা। সপ্তাহ ব্যবধানে হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম কমছে।
 
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির দাম। তবে এ সপ্তাহে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও সরবরাহ ঠিক থাকলে সামনে আরও কমবে।
 
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, লতি ৬০-৭০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, কচুরমুখি ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।

এ ছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ৬০-৮০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ৬০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা।
 
এদিকে নিম্নমুখী শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।

আরও পড়ুন: রাজধানীর যে ১৩ স্থানে আজ থেকে ডিম মিলবে সুলভ মূল্যে
 
দাম কমছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে কাঁচা মরিচের। এতে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই কমেছে দাম।
 
বাজারে কমছে মুরগির দামও। কেজিতে ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
 
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম কমেছে। তবে সামনে বিয়ের মৌসুম আসছে। সে সময় আবারও বাড়তে পারে মুরগির দাম।
 
তবে বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
 
এদিকে বাজারে অভিযান চালানো, সভা-সেমিনার করা, আমদানি শুল্ক হ্রাস ও আমদানির অনুমতিসহ নানা নাটকীয়তার পর স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে; বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদক পর্যায় থেকে কম দামে ডিম কিনতে পারলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
 
বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়।
 
এদিকে রমজানকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে ছোলা ও তেলের দাম। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল যথাক্রমে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৮০ ও ১৮০ টাকা।
 
টিসিবির বাজারদরের তথ্যেও প্রমাণ মিলেছে দাম বৃদ্ধির। জানা যায়, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। লিটারে ১২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে।

 আরও পড়ুন: অসচ্ছল নারীদের মাসে ৩০ কেজি চাল ফ্রি দিচ্ছে সরকার, আবেদন করতে হবে যেভাবে

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে ডিলাররা বাড়াতে শুরু করে পণ্যের দাম। পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না। এক মাসের ব্যবধানে তেলের দাম লিটারে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
 
তবে বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
 
এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কই মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
 
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।


সর্বশেষ সংবাদ