ঘরে বসে কীভাবে করবেন ই-পাসপোর্ট, খরচ কত টাকা

কীভাবে করবেন ই-পাসপোর্ট
কীভাবে করবেন ই-পাসপোর্ট  © সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা  ই-পাসপোর্টে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের অনেকেই এখনও কীভাবে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হয়, তা জানেন না। আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে সতর্কতার সঙ্গে কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে।

ঘরে বসে ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে কী লাগে, ই–পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম ও খরচ, কত দিনে পাওয়া যায় ইত্যাদি সম্পর্কে জানা জরুরি। এছাড়া আবেদনের আগেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে রাখলে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

কেননা, একটি ই–পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার (সাবমিট করা) পর যদি দেখেন, কোথাও ভুল হয়েছে, তাহলে আপনি তা সংশোধন করার সুযোগ পাবেন না। সেই সঙ্গে, একটি ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একবারই ই–পাসপার্টের জন্য আবেদন করা যায়।

আবেদনের জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে
১. ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো কাগজপত্র সত্যায়নের প্রয়োজন নেই।
২. ই-পাসপোর্ট ফরমে কোনো ছবি সংযোজন এবং তা সত্যায়ন করতে হবে না।
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
৪. অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার এনআইডি নেই তার বাবা বা মায়ের এনআইডি নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
৫. এনআইডি অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নিম্নোক্ত বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে:
(ক) ১৮ বছরের নিচে হলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ।
(খ) ১৮-২০ বছর হলে এনআইডি অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ।
(গ) ২০ বছরের ঊর্ধ্বে হলে এনআইডি লাগবে. তবে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণযোগ্য হবে।
৬. দত্তক বা অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আদেশ দাখিল করতে হবে।
৭. প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) সংযোজন করতে হবে.
৮. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও বা এনওসি বা প্রত্যয়নপত্র বা অবসরোত্তর ছুটির আদেশ বা পেনশন বই সংযোজন করতে হবে, যা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে আপলোড থাকতে হবে।
৯. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহের সনদ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
১০. অতি জরুরি পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে (নতুন ইস্যু) নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবশ্যিকভাবে আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে.
১১. পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট দেখাতে হবে।
১২. হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি দেখাতে হবে।
১৩. ৬ বছর বয়সের নিচের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩ আর (3R Size) সাইজের (ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রউন্ড) ছবি দাখিল করতে হবে.
১৪. পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে. পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সময় পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি এবং জিডি কপিসহ আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে.

ই-পাসপোর্ট আবেদন যেভাবে করবেন
অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুলে সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়। আবেদন জমা দেওয়ার দিন–তারিখও পাওয়া যাবে অনলাইনে। কাগজপত্রেও লাগছে না কোনো সত্যায়ন. প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে।

ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন’–এ ক্লিক করতে হবে.।সেখানে শুরুতেই অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/রি-ইস্যু বাটনে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। তবে আবেদন করার আগে দেখে নিতে হবে, ই-পাসপোর্ট আবেদনের পাঁচটি ধাপ।

প্রথম ধাপে বর্তমান ঠিকানার জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করে ক্লিক করতে হবে। পরের ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবেভ। তৃতীয় ধাপে মেয়াদ ও পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফি জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যায়।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে ‘এভরিওয়ান ট্যাগ’ থেকে আসা নোটিফিকেশন বন্ধ করার উপায়

যা করতে হবে
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ ও পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করে ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য তারিখ নেবেন। তারপর নির্ধারিত তারিখে অনলাইন আবেদন ফরমের কপি, পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট, যে বাসায় থাকেন সে বাসার বিদ্যুৎ বিলের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পুরান পাসপোর্টের কপিসহ পাসপোর্ট অফিসে যাবেন। সঙ্গে অবশ্যই মূল কাগজপত্রগুলোও সঙ্গে নেবেন। এরপর ছবি ও আঙুলের ছাপের জন্য পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়াবেন। ছবি তোলা, সব আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি গ্রহণ শেষে আপনাকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ একটি রিসিট দেবে। পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। আপনার পাসপোর্ট হয়ে গেলে আপনাকে মেসেজ করে জানাবে. এরপর আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে আসবেন।

পাসপোর্ট করতে যা যা লাগবে
একজন প্রাপ্তবয়স্কের ই-পাসপোর্ট করতে ফরম পূরণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্ট কার্ড এবং ছবি জমা দিতে হবে। এ ছাড়া ১৮-এর কমবয়সীদের জন্য জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১ কর্মদিবস) ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি (১০ কর্মদিবস) ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্মদিবস) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।

৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা. সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীরা কেবলমাত্র ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন. অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন সঙ্গে আনতে হবে।

ই-পাসপোর্টে যেসব সুবিধা পাবেন
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- বিভিন্ন বিমানবন্দরে আপনাকে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই আপনি ই-গেট ব্যবহারের মাধ্যমে খুব দ্রুত ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে পারবেন। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করায় আপনার পাসপোর্ট জাল করার ঝুঁকি কম থাকবে। এ ছাড়া ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোয় নবায়নের ঝামেলা এড়াতে পারবেন।

বর্তমানে যেসব অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু আছে
১. আগারগাঁও ২. যাত্রাবাড়ি ৩. উত্তরা ৪. ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ৫. বাংলাদেশ সচিবালয় ৬. গাজীপুর ৭. মনছুরাবাদ ৮. ময়মনসিংহ ৯. পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০. গাইবান্ধা ১১. গোপালগঞ্জ ১২. মানিকগঞ্জ ১৩. নরসিংদী ১৪. নোয়াখালী ১৫. ফেনী ১৬. চাঁদগাওঁ ১৭. কুমিল্লা ১৮. মুন্সিগঞ্জ ১৯. সিলেট ২০. মৌলভীবাজার ২১. সুনামগঞ্জ ২২. হবিগঞ্জ ২৩. যশোর ২৪. খুলনা ২৫. কুষ্টিয়া ২৬. বি-বাড়িয়া ২৭. রাজশাহী ২৮. চাপাইনবাবগঞ্জ ২৯. বগুড়া ৩০. রংপুর ৩১. দিনাজপুর ৩২. নওগাঁ ৩৩. জয়পুরহাট ৩৪. বরিশাল ৩৫. পটুয়াখালি ৩৬. পাবনা ৩৭. সিরাজগঞ্জ ৩৮. কিশোরগঞ্জ ৩৯. নাটোর ৪০. মাগুরা ৪১. নড়াইল ৪২. লক্ষ্মীপুর ৪৩. টাঙ্গাইল ৪৪. জামালপুর ৪৫. শেরপুর ৪৬. নেত্রকোনা ৪৭. মাদারীপুর ৪৮. ফরিদপুর ৪৯. রাজবাড়ী ৫০. ঝিনাইদহ ৫১. সাতক্ষীরা ৫২. বাগেরহাট ৫৩. ভোলা ৫৪. বরগুনা ৫৫. চুয়াডাঙ্গা ৫৬. ঝালকাঠি ৫৭. কুড়িগ্রাম ৫৮. লালমনিরহাট ৫৯. মেহেরপুর ৬০. নীলফামারী ৬১. পঞ্চগড় ৬২. পিরোজপুর ৬৩. শরীয়তপুর৬৪. ঠাকুরগাঁও ৬৫. বান্দরবান ৬৬. চাঁদপুর ৬৭. কক্সবাজার ৬৮. খাগড়াছড়ি ৬৯. নারায়নগঞ্জ ৭০. রাঙামাটি ৭১. ঢাকা পূর্ব (মোহাম্মদপুর) ৭২. ঢাকা পশ্চিম (আফতাবনগর). 


সর্বশেষ সংবাদ