প্রস্তাবনা দিয়েও মেলেনি সাড়া, শঙ্কায় আনঅফিশিয়াল মোবাইল বিক্রেতারা

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে মোবাইলের দোকান
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে মোবাইলের দোকান  © টিডিসি

অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবায় আর্থিক জালিয়াতি সনাক্ত, মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি রোধসহ সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর)। নতুন এই ব্যবস্থায় শুধু অনুমোদিত, মানসম্মত ও বৈধভাবে আমদানিকৃত মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্পন্ন সেবা পাবেন গ্রাহকরা এবং ভবিষ্যতে অবৈধ বা ক্লোন আইএমইআই ফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারবে না বলেও গত ২৯ অক্টোবর ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী জনাব ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

২০২৪ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি হয় অবৈধ ডিভাইস ও সিম থেকে যা এনইআইআর চালুর মাধ্যম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। অবৈধ হ্যান্ডসেটের কারণে প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়  বলেও সেদিন উল্লেখ করেন তিনি। নতুন সিদ্ধান্তে এনইআইআর কেবল প্রযুক্তিগত সুবিধা নয় বরং এটা রাষ্ট্রীয় ও গ্রাহক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং সিমের মাধ্যমে প্রতারণা, আর্থিক লেনদেন জালিয়াতি কমে আসবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

বিষয়টি নিয়ে খুশি নন আনঅফিশিয়াল মোবাইল বিক্রেতারা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে অন্তত ছয়টি দাবি ও প্রস্তাবনা দিয়েছেন এসব ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ। তবে কোন দপ্তর থেকে এখনো সাড়া মেলেনি। ফলে শঙ্কায় রয়েছেন আনঅফিশিয়াল মোবাইল বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, 'ক্ষুদ্র ও মাঝারি মোবাইল ব্যবসার সাথে ২৫ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী ও প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা জড়িত। বিটিআরসি কর্তৃক গৃহিত সিদ্ধান্তে শুধুমাত্র যে এই খাতে জড়িত ব্যক্তিবর্গই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয় বরং সাধারণ জনগনও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।'

সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সঙ্কটের সমাধান চান মন্তব্য করে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সভাপতি মো. আসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে চাই। আমরা বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাবনা দিয়েছি। সরকারের সঙ্গে বসতে একটা ভালো সমাধান আসবে। কিন্তু আলোচনা না করেই এভাবে বন্ধ করে দিলে আমরা কোথায় যাবো ?

তিনি বলেন, আমরা এই ব্যবসার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। সেই টাকা তো পরিশোধ করতে হবে। মাঝপথে ব্যবসা বন্ধ হলে আমরা রাস্তায় বসে যাবো। সরকারের উচিত হবে সব অংশীদারদের সঙ্গে বসে সময় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানের রূপরেখা প্রণয়ন করা।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে মোবাইলের ব্যবসা করেন মো. আনিসুর রহমান সোহেল, একইসঙ্গে তিনি মোবাইল বিজনেস বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, "আমারা বছরের পর বছর এই ব্যবসা করে আসছি। কোটি কোটি টাকা আমরা এখানে বিনিয়োগ করেছি। সারাদেশে ২৫ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী এই মোবাইল বিক্রি করছে। তাদের সঙ্গে কর্মচারী এবং তাদের পরিবার মিলিয়ে কয়েক লাখ মানুষ এই ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। এখন হুট করেই এই ব্যবসা বন্ধ করে দিলে আমরা কোথায় যাবো, কী করবো ?"

সোহেল বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে নানা খাতের অনেক মানুষ জড়িত। আমরা ব্যবসায়ীরা আছি, আমাদের কর্মচারীরা আছেন। এছাড়া আমরা ডিজিটালি যখন প্রচার প্রচারণা চালায় তখন ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ডিজিটাল মার্কেটারদের মাধ্যমে প্রচারণা চালায়। এক্ষেত্রে ব্যবসা বন্ধ হলে সবার ওপর প্রভাব পড়বে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ