শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো নিয়ে যা বললেন মাউশি ডিজি

প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীম ও মাউশি লোগো
প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীম ও মাউশি লোগো  © ফাইল ছবি

‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। কীভাবে তাদের আরও সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়টি কাজ চলছে।’

সম্প্রতি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীম।

মাউশি ডিজির অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা এ অধ্যাপক আরও বলেন, শিক্ষকদের যদি আমরা মনোতুষ্ট করতে না পারি, তাহলে আমরা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারবো না। এজন্য আমরা শিক্ষকদের সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই দশকের বেশি আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশের প্রায় ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নামমাত্র উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। তার আগে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের কাছ থেকে উৎসব ভাতা পেতেন না। ২০০৩ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছরের অক্টোবরে তা কার্যকর হয়। তখন সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকদের দেওয়া হবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। তবে দুই ঈদে (অথবা পূজায়) ২৫ শতাংশ করে ভাগ করে তা দেওয়া হবে। সেই থেকে প্রতি ঈদে শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। আর কর্মচারীদের জন্য ওই সভায় শতভাগ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুই ঈদে ৫০ শতাংশ করে তা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যখন হয় তখন সরকারের কাছ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৯৫ শতাংশ বেতন দেওয়া হতো। পরে ২০০৫ সালে সরকার ৫ শতাংশ বাড়িয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের শতভাগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়; কিন্তু উৎসব ভাতা বাড়েনি।

শিক্ষকরা জানান, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতনের ৮০ শতাংশ দিত সরকার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা ৯০ শতাংশে উন্নীত করে। ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকার তা শতভাগে উন্নীতের ঘোষণা দিলেও বাজেটে ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করে। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা শতভাগে নিয়ে যায়। দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেল ধাপে ধাপে শতভাগে উন্নীত হলেও, উৎসব ভাতা বাড়েনি।

আগের সেই নিয়মে এবারও ঈদুল ফিতরে ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তবে এবার ঈদের আগেই তারা তা হাতে পাবেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এরই মধ্যে উৎসব ভাতা চূড়ান্ত করেছে। এবার ৩০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীকে ২৪০ কোটি টাকা উৎসব ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে এপ্রিল মাসের বেতন হিসাবে তারা পাবেন ৭৮৩ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা।

মূল বেতনের ২৫ শতাংশ বোনাস পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষদের বেতন স্কেল ৫০ হাজার টাকা, উপাধ্যক্ষ ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষদের ৪৩ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, টাইম স্কেলপ্রাপ্ত প্রভাষক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ২৯ হাজার টাকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের ২৩ হাজার টাকা, প্রভাষক/গ্রন্থাগারিক, সহকারী শিক্ষকদের (টাইম স্কেলপ্রাপ্ত) ২২ হাজার টাকা, প্রদর্শক/সহকারী গ্রন্থাগারিক/শরীরচর্চা শিক্ষক/সহকারী শিক্ষকদের (টাইম স্কেল ব্যতীত) ১৬ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের (বিএড ব্যতীত) ১২ হাজার ৫০০ টাকা।

অন্যদিকে, ৫০ শতাংশ বোনাস পেতে যাওয়া কর্মচারীদের মধ্যে টাইম স্কেল পাওয়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মীদের বেতন স্কেল ৯ হাজার ৭০০ টাকা, টাইম স্কেল ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কর্মীদের ৯ হাজার ৩০০ টাকা, ল্যাব সহকারীর ৮ হাজার ৮০০ টাকা, টাইম স্কেল পাওয়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন স্কেল ৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং টাইম স্কেল ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন স্কেল ৮ হাজার ৩৫০ টাকা।


সর্বশেষ সংবাদ