ত্রিমুখী চাপ: ফের খুলছে ঢাবির করোনা ল্যাব!
- মোতাহার হোসেন, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ০৮:১০ PM , আপডেট: ০৮ জুন ২০২০, ১০:১২ AM
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (কারাস) ভবনে চালু করা ল্যাবটি একমাস পার না হতেই বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ত্রিমুখী চাপে পড়েছে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা। এখন তারা বলছেন, শিগগিরই ল্যাবটি পুনরায় চালুর চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা।
জানা গেছে, সম্প্রতি করোনা ল্যাব বন্ধ করার ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে এ নিয়ে অনেকে কড়া সমালোচনার পাশাপাশি ‘ঠুনকো’ অজুহাতে ল্যাব বন্ধের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ সময় তারা ল্যাবটি পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত জানান। যা পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে আনুষ্ঠানিকভাাবে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সভায় নেয়া সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের কপি উপাচার্যের কাছে দিয়েছি। উপাচার্যকে আমরা করোনা পরীক্ষার ল্যাব পুনরায় চালুর অনুরোধ করেছি। আশা করছি, সকল সংকটের অবসান ঘটিয়ে ল্যাবটি পুনরায় চালু করা হবে।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ল্যাব বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবগত। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারকদের কাছে ল্যাব বন্ধের ব্যাখ্যাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ল্যাব বন্ধ করার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করছেন, এভাবে ল্যাবটা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। সমস্যা থাকলে সেটি সমাধান করে চালু রাখা জরুরি ছিল। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্যও পরীক্ষা করার সুযোগ রাখতে পারে।
তবে ল্যাব বন্ধ নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে দাবি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় একটি মানবিক ক্যাম্পাস। প্রতিটি সদস্য উদার, মানবিক এবং সবসময় জাতির কল্যাণে কাজ করে আসছে। যৌক্তিক কারণে সাময়িক কোন সেবা বন্ধ হলেই বিভিন্নভাবে অপব্যাখ্যা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্বেষী একটি চক্র, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে ছোট করার অপপ্রয়াস। ল্যাবের বিষয়ে আমাদের টেকনিক্যাল কমিটিকে বলা হয়েছে। মানবিক কারণে আরো সেবা লাগলে যারা সেবা কার্যক্রম চালু করবে, তাদের একত্রিত করা যায় কি না। আমাদের মনে রাখতে হবে, ত্রাণ বিতরণ স্যালাইন বিতরণ আর করোনার টেস্ট করা এক কাজ নয়।’
জানা গেছে, কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ৫টি আরটি পিসিআর ও ১০টি কনভেনশনাল পিসিআর মেশিন রয়েছে। এরপরও ‘ঠুনকো’ অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় ল্যাব। চালুর পর প্রতিদিন প্রায় ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করা হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে।
ল্যাবটি বন্ধের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে। উপাচার্য বলেছেন, বিভিন্ন বিভাগের যন্ত্রপাতি নিয়ে ল্যাবটি চালু করা হয়েছিল। এখন গবেষণার কাজে সেগুলো ফেরত দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেকরা কাজে ফিরে যাওয়াসহ অনেকগুলো ফ্যাক্টর মিলিয়ে ল্যাবটি বন্ধ হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাব ও অর্থ সঙ্কটের মতো কারণ জাানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড.শরীফ আখতারুজ্জামান। এছাড়া দক্ষ জনবলের ঘাটতির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। যদিও উপাচার্য অর্থিক সংকটের কথা স্বীকার করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ শুরুকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।