শীত আর ব্যাডমিন্টন যেন একই সুতোয় গাঁথা!

কাঁপতে কাঁপতে কোর্টে এসে ব্যাট হাতে শুরু করলেই হলো; কোথায় যায় শীত, কোথায় যায় জড়তা!
কাঁপতে কাঁপতে কোর্টে এসে ব্যাট হাতে শুরু করলেই হলো; কোথায় যায় শীত, কোথায় যায় জড়তা!  © টিডিসি ফটো

শীতের শিরশির হাওয়ার আগমনী বার্তা হলো গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের অলিতে গলিতে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে খেলাটির প্রতি প্রবল আগ্রহ জানান দেয় শীত আর ব্যাডমিন্টন যেন একই সূত্রে গাঁথা ভাই। বাংলাদেশে ক্রিকেট এবং ফুটবলপ্রেমীদের সংখ্যা বেশি হলেও এদেশের মানুষের কাছে শীত মানেই ব্যাডমিন্টন।

আগের মানুষ শীতের সন্ধ্যায় লাকড়ি জ্বালিয়ে বৃত্তাকার হয়ে ঘিরে বসে থাকত। হাতে পায়ে আগুনের তাপ দিয়ে উষ্ণ করত শরীর। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে গ্রামের মক্তবে আমসিপাড়া পড়ুয়া শিশুটিও গল্প জুড়ে দিত বড়দের সাথে। তবে পরিবর্তন এসেছে। শীতের মৌসুমে এখন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি ব্যাডমিন্টন খেলায় মত্ত থাকে প্রায় সব বয়সের মানুষ। গ্রামের উঠোনে, ক্ষেতে এবং শহরের অলিগলি ও বাসার ছাদে এই ‘মৌসুমি’ খেলার হিড়িক পড়ে যায়।

সব বয়সের মানুষই খেলতে পারে খেলাটি; যা শিখতেও বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না; হয় না বড় জায়গার প্রয়োজন। বিশেষ ব্যয়বহুল সরঞ্জামের দরকারও পড়ে না। দরকার শুধু একটা নেট, কয়েকটি কর্ক, ব্যাট আর বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে আলোর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সেই মৌসুম চলছে। বিভিন্ন স্থানেই কাটা হয়েছে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। বিশেষত টিএসসি, সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়ার সামনে, হলের মাঠে একাধিক খেলার জন্য কোর্ট তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা। এক পক্ষে দুই জন করে মোট চারজনের অংশগ্রহণে মেতে উঠছে এই খেলায়। ব্যাডমিন্টন কোর্টকে ঘিরেও আড্ডা জমছে দর্শকদের। দর্শকসারীর বন্ধুরা বসে থাকে কবে একটা রাউন্ড শেষ হবে এবং বন্ধুদের ব্যাটটা দৌড়ে আগে গিয়ে নেবে।

ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর বলেন, আমরা সাধারণত রাতে খেলতে খুব কমই দেখি। কিন্তু শীত আসলে রাতের অন্ধকার ব্যাডমিন্টন কোর্টের আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। খেলতে খুব ভাল লাগে। যদিও চারজন খেললে অনেকে উৎসুক হয়ে বসে থাকে কবে একটু ব্যাটটা হাতে নিতে পারবে। শীতের রাতে একদম পারফেক্ট একটা খেলা ব্যাডমিন্টন।

সূর্যসেন হল ছাত্র সংসদের জিএস সিয়াম আহমেদ সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়ার সামনের কোর্টে খেলছিলেন। তিনি বলেন, ‘শীতের হিম প্রবাহের কারণে যেখানে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয় সেখানে আমরা দেখতে পাই যে গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে ঢাকা শহরের অলিগলি, এমনকি রাস্তায়ও ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। এখন ব্যাডমিন্টন কোর্টের কারণে আলোকিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি জায়গা। আমি এই খেলার মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক দুইভাবেই প্রশান্তি অনুভব করি। একজন মানুষের দৈনিক যতটুকু পরিশ্রম করা প্রয়োজন ঢাকা শহরে থেকে তা আসলে সম্ভব হয়না। কিন্তু রাতের এই খেলাটি শারীরিক এবং মানসিক উৎকর্ষ উভয়ই সাধন করে।’

তিনি বলেন, শীতের শুরুতেই আমরা হল সংসদ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৮টি ব্যাট, ১২ ডজন কর্ক দিয়েছি যাতে সারাবছর খেলতে পারে এবং প্রতি বছর সূর্যসেন হলে একটি কোর্ট করা হলেও এবারে আমরা দুইটা করেছি।
ঢাবির ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র হৃদয় মোস্তফা বলেন, 'সবচেয়ে অস্থির মুহূর্ত হচ্ছে যখন দর্শকসারিতে বসে থাকি।কখন খেলা শেষ হবে,কখন মাঠে নামব এই প্রবল আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি।শীত আসলে আমি সব খেলা বাদ দিলেও ব্যাডমিন্টন খেলা ছাড়তে পারিনা।

এই খেলা শুধু আনন্দের না, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীও বটে। জেনে নিই কয়েকটি উপকারিতা।

১। ওজন কমাতে ব্যাডমিন্টন খুবই কার্যকর একটি খেলা। ১ ঘণ্টা ব্যাডমিন্টন খেললে প্রায় ৫০০ ক্যালরি বার্ন হয়।
২। কাজের প্রতি আগ্রহ এবং মনোযোগ বাড়ায়।ব্যাডমিন্টন খেলা মনকে সতেজ ও ফুরফুরে করে তোলে।মানসিক ক্লান্তি দুর হয় এবং কাজের প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি করে।
৩। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এই খেলাটি।দৈনিক এক ঘণ্টা এই খেলাটি খেললে রক্তের সুগার কমাবে যা ডায়াবেটিসের জন্য মূলত দায়ী।
৪। উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৫। কার্যক্ষমতা এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।

ব্যাডমিন্টন উপকারী খেলা হলেও এটাকে ঘিরে খুনের মত ঘটনাও অনেক ঘটেছে। ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি ময়মনসিংহে ব্যাডমিন্টনকে ঘিরে ২ কলেজ ছাত্র ছুরিকাঘাতে খুন হন। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর গাজীপুরের বোর্ড বাজারের চান্না এলাকায় ১৪ বছরের শিশু শ্রাবণ খুন হন। এছাড়াও রয়েছে অনেক ছোটবড় আঘাত এবং দুর্ঘটনা। সুতরাং কিছু ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১। সতীর্থদের সাথে কোন ধরনের যাতে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২। কোর্ট যাতে সমতল হয়; না হলে হোঁচট খেয়ে পায়ে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩। চোখের সমস্যা থাকলে রাতে কম আলোতে না খেলাই ভাল।
৪। ত্রুটিপূর্ণ ব্যাট এবং কর্ক পরিহার করা; তা না হলে অন্য নিজের বা অন্য কারোর শরীরে আঘাত লাগতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ